Monday, April 15, 2019

স্বয়ম্ভূ সুন্দর – নির্মলেন্দু গুণ

স্বয়ম্ভূ সুন্দর –
নির্মলেন্দু গুণ
যতক্ষণ জেগে থাকি, দরোজাটা বন্ধ করি না। কেবলই মনে হয় কেউ একজন আসবে। আমার প্রত্যাশায় এমন একজন নারী আছে, কোনো শিল্পী যাকে আঁকতে পারেনি। লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, আঁরি মাতিস, পাবলো পিকাসো অথবা যামিনী রায়, কেউ-ই আঁকতে পারে নি তাকে। মারকন্যার উদাস দৃষ্টির মধ্যে মুহূর্তর জন্য আমি তাকে মূর্ত হতে দেখেছিলাম খাজুরাহে। ব্যর্থ শিল্পী, আমার বাবার আঁকা একটি জলরঙ ছবির ভিতরে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম তার পেছন ফিরে তাকানোর উদ্দীপক সলজ্জ ভঙ্গিটি। যদিও আমি জানি যে, সে-ছবির মডেল ছিলেন আমার সিক্তবসনা মাতা, আমার জননী। এভাবেই কুড়িয়ে পাওয়া খণ্ড-খণ্ড দৃশ্যগুলোকে মালার মতো গেঁথে যদি তাকে আঁকা যায়, আমার মনে হয় না তাতেও খুব একটা লাভ হবে। কেননা, শিল্পমাত্রই তো অনুকৃতি, বাস্তবের। অথচ আমি যার কথা ভাবি, যার জন্য অন্ধকারের দুয়ার খুলে দিয়ে বসে থাকি অপেক্ষায়- তাকে আমি কোনদিন বাইরে দেখিনি। তাই কেমন করে বলি, তাকে কেমনতরো দেখায়? সে তো গাছের ফুলের মতো নয়, সে তো আকাশের বৃষ্টি ভেজা সহজলভ্য চাঁদের মতো নয়। সে অন্যরকম। ভীষণ অন্যরকম। তার যুগলস্তনের দুর্গে মাথা কোটে অরন্য-পর্বত। তার উড়ন্ত ঊরুযুগে পদানত মেঘের উর্বশী। প্রজননের সঙ্গে অসম্পৃক্ত তার গর্ভদেশ। তার যুগলব্যাকুলবাহু পুরুষকে আলিঙ্গনে জড়িয়ে রাখা ছাড়া আর কোনো জাগতিক কর্তব্য শিখেনি। আমি চাই সে আমার জাগরণের মধ্যে আসুক। কারো কন্যারুপে নয়, কারো ভগ্নিরুপে নয়, কারো বধূরুপে নয়, কারো মাতৃরুপে নয়, জগৎ-সংসারের সকল বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে সে আসুক, স্বয়ম্ভূ সুন্দর। সে যখন সম্পূর্ণ নিরাভরণ, তখন যেমন উলঙ্গতার আচ্ছাদনে সে চিরআবৃতা, তেমনি, যখন সে কল্পনার অন্ধকারে ছায়াবৃতা; তখনও আমার দৃষ্টির মধ্যে সে চির-নগ্ন। আমি যাচ্ঞা করি সেই চির-নগ্নিকাকে। যতক্ষণ জেগে থাকি, দরোজাটা বন্ধ করি না। মন বলে সে আসবে। আমি চাই না, সে আমার নিদ্রার মধ্যে আসুক, আর আমি নিদ্রাশেষে, জাগরণে তার চলে যাওয়ার বেদনায় অশ্রুপাত করি।

No comments:

Post a Comment

সুখ, ভালোবাসা, আদর

জীবনকে সঠিক পথে চলতে কষ্ট করে পড়ার অনুরোধ রইল ----------------------- ১. ঘুম থেকে উঠে নামাজ ও স্রষ্টার প্রতি আপনার আজকের প্রার্থনা করে নিন। ...