Saturday, April 13, 2019

হঠাৎ দেখা




(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা প্রিয় কবিতা )

হঠাৎদেখা রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা , ভাবিনি সম্ভব হবে কোনদিন ।। আগে ওকে বারবার দেখেছি লাল রঙের শাড়িতে -- দালিম-ফুলের মত রাঙা; আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়, আঁচল তুলেছে মাথায় দোলন-চাঁপার মত চিকন-গৌর মুখখানি ঘিরে । মনে হল, কাল রঙের একটা গভীর দূরত্ব ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে, যে দূরত্ব সর্ষেক্ষেতের শেষ সীমানায় শালবনের নীলাঞ্জনে । থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা : চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে ।। হঠাৎ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে আমাকে করলে নমস্কার । সমাজবিধির পথ গেল খুলে : আলাপ করলেম শুরু -- 'কেমন আছো', 'কেমন চলছে সংসার ' ইত্যাদি । সে রইল জানালার বাইরের দিকে চেয়ে যেন কাছের-দিনের-ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে । দিলে অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা জবাব , কোনটা বা দিলেই না । বুঝিয়ে দিলে হাতের অস্থিরতায় -- কেন এ-সব কথা , এর চেয়ে অনেক ভাল চুপ ক'রে থাকা ।। আমি ছিলেম অন্য বেঞ্চিতে ওর সাথিদের সঙ্গে । এক সময়ে আঙুল নেড়ে জানালে কাছে আসতে । মনে হল কম সাহস নয় -- বসলুম ওর এক বেঞ্চিতে । গাড়ির আওয়াজের আড়ালে বললে মৃদুস্বরে , 'কিছু মনে কোরো না , সময় কোথা সময় নষ্ট করবার ! আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই ; দূরে যাবে তুমি , তাই, যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে , শুনব তোমার মুখে । সত্য করে বলবে তো ?' আমি বললাম ,'বলব' । বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোল, 'আমাদের গেছে যে দিন একেবারেই কি গেছে -- কিছুই কি নেই বাকি?' একটুকু রইলেম চুপ করে ; তার পর বললেম , 'রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে' । খটকা লাগল, কী জানি বানিয়ে বললেম নাকি । ও বললে, 'থাক এখন যাও ও দিকে' সবাই নেমে গেল পরের স্টেশনে । আমি চললেম একা ।।

No comments:

Post a Comment

সুখ, ভালোবাসা, আদর

জীবনকে সঠিক পথে চলতে কষ্ট করে পড়ার অনুরোধ রইল ----------------------- ১. ঘুম থেকে উঠে নামাজ ও স্রষ্টার প্রতি আপনার আজকের প্রার্থনা করে নিন। ...