মুড সুইং – একটি আটপৌরে ঘুম পাড়ানি গান ও কিছু কথা’
আগেও বলেছি আমার ওয়াইফ যদি কোনদিন আমার কলিজা ভুনা করে খেয়েও ফেলে আমি মোটেও অবাক হবো না! বড় জোড়, রি-একশনে একটা ছোটখাটো হাই তুলতে পারি…
বিকট শব্দে চিল্লাফাল্লা করে বাড়ি মাথায় তোলার ব্যাপারে কোন নোবেল প্রাইজের ব্যবস্থা থাকলে আমার ওয়াইফের নোবেল প্রাইজ পাবার সম্ভবনা প্রবল বলেই আমার ধারনা!
কোন একটা স্পেসিফিক সময়ে সে এতোটাই হাইপার থাকে, ঘটি/বাটি, রাবার,কেঁচি, আইলাইনার/মাশাকারা - চোখের সামনে যাই পায় তাই ছুড়ে মারে! জোকস বলে হাসানোর চেস্টা করলে বিরক্ত চোখে কিটমিট করে তাকায়। আমি যাই বলি তাই তার অসহ্য লাগে! গায়ে পড়ে ঝগড়া করে…
পুরুষ শাসিত সমাজে বৌ এর উচু গলায় কথা বলা মেনে নিতে আমার কস্ট হয়! ইগো পেছন থেকে আমাকে উস্কানি দিয়ে বলে ‘ দ্যাখ! তোর বউ বেশি বাড়াবাড়ি করতেছে না?? একটা থাব্রা দিয়া কান বয়রা কইরা দে! তোর সামনে আর চিল্লানোর সাহস পাইবো না!’
কিন্তু যেহেতু আমি এই যুগের ‘কুল ডুড’ তাই ইগো তাড়িত ‘থাব্রা দিয়ে কান বয়রা করে দেওয়া’র আইডিয়া আমার পছন্দ হয় না! কিন্তু আমার পৌরুসত্তের পরিচয় দিতে গিয়ে আমিও গলা হাকিয়ে চিলাচিল্লি করি! এবং যেহেতু আমি একজন খারাপ মানুষ তাই ঝগড়া জমিয়ে আমার জয় নিশ্চিত করতে খুঁজে পেতে ওর খুঁত বের করি এবং ঐগুলোকে হাতিয়ার বানিয়ে সেগুলা নিয়ে খোঁটা দিয়ে বিমলানন্দ লাভ করি! ও চুপ হয়ে যায়। কোন এক কোনায় একা একা কান্নাকাটি করে…
ঘুমাতে যাবার সময়, ঐ সবার আগে মাফ চায়! তার মুড সুইং হবার জন্য আমাকে সরি বলে! যেহেতু আমি খারাপ মানুষ, তাই আমি সরি না বলেই মনে মনে বিজয়ের হাসি হাসতে থাকি!!
এইবার একটা ব্রেক!
এখন আসল কথায় আসি! আমি ভাবতাম ‘মুড সুইং’ হচ্ছে এমন একটা ছুতা যার সাহায্যে ইচ্ছা মত ঝগড়া করে সব দোষ দিন শেষে ‘মুড সুইং’ এর ঘাড়ে ফেলে ঝগড়াটাকে হালাল করা যায়!
কিন্তু ব্যাপারটা আসল তা না! মোটামুটি ঘন্টা খানেক অনলাইনে পড়াশুনা করে যা জানলাম তার একটা ঝলক নিচে উপস্থাপন করছি!
এই সময় শরীরের হরমোন খুব ভায়োলেন্ট ভাবে ছোটাছুটি করে! ব্রেইনের কেমিক্যাল রি-একশনে একটা বড় চেঞ্জ আসে! সেরোটনিন কমতে থাকে! ব্রেইনে সেরোটনিন ঘাটতি দেখা দেয় একটা সময়! এর জন্যই বেসিকেলি একটা আরটিফিসিয়াল ডিপ্রেশন তৈরি হয়! একটা মেয়ে যা দেখে সব কিছুতে বিরক্ত হয়!
গোঁদের উপর বিষ ফোড়া হয়ে দেখা দেয় প্রচণ্ড ফিজিক্যাল পেইন! আপনি নিজে একবার ভাবেন তো- আপনি ভয়াবহ বলসের ব্যথায় আক্রান্ত! ব্যথায় আপনার প্রাণ যায় যায় অবস্থা! এই অবস্থায় আপনাকে যদি সুর করে সুকান্তের কবিতা শোনানো হয় – আপনার ভালো লাগবে?
একটা মেয়ের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই! সে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে দুনিয়ার সব কাজই করছে! এদিকে ব্রেইনে সেরোটনিন কমে যাওয়াতে সাইন্টিফিক্যালি তার মেজাজ খিটখিটে! সে ঝগড়া করছে! বিরক্ত হচ্ছে! চিল্লাচ্ছে!! কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না!
দুনিয়াতে তাকে সেই মুহূর্তে বোঝার মত একটা লোকও নাই!
আমার মত আপনার পরিবারেও ঘটতে পারে এই ঘটনা! এখন থেকে আপনি কি করবেন?
এই সময়টায় she needs attention. She needs compassion!
একটা জ্বরের রোগীকে দেখতে যদি ফল-মুল-দুধ-কলা নিয়ে হাজির হতে পারেন, এটলিস্ট আপনার পাশে প্রচন্ড শারীরিক ব্যথা আর ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষটার প্রতি অন্তত একটু সহানুভূতিশীল তো হতেই পারেন!
আমি এই ব্যাপারটায় অজ্ঞ ছিলাম! ভুলে করেছি!! আপনি তো এখন জানেন!
একটু সহানুভূতিশীল হবেন কি?
বিঃদ্র- আমার বৌ আমারে বলে তার নাকি সাত জনমের ভাগ্য সে আমারে পাইছে!
ভুয়া কথা!
নিজের ভুল গুলার কথা মনে হইলে নিজেরেই থাব্রা দেওয়ার কথা মনে হয়! কত্ত অবিচার করছি! এই নিয়ে ও একটা টু শব্দ করে নাই!
আসলে আমারই সাত জনমের ভাগ্য! সারা জীবন সেজদায় পইড়া থাকলেও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় হবে না!
No comments:
Post a Comment