Sunday, April 21, 2019
দ্বিধাগ্রস্ত দাঁড়িয়ে আছি
দ্বিধাগ্রস্ত দাঁড়িয়ে আছি
— রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
সেই যে আমি দাঁড়িয়েছিলাম, মনে পড়ছে?
সেই যে আমি উসস্কো-খুস্কো আউল বাউল একমাথা চুল,
সেই যে আমি রক্তচুক্ষ, দুই চোখে দুই রক্তজবা
মনে পড়ছে?
সেই যে আমি দাঁড়িয়েছিলাম, তোমার স্মৃতিবন্ধের উপর
দাঁড়িয়েছিলাম, মনে পড়ছে? সকাল, তোমার মনে পড়ছে?
সেই যে আমি মিছিল জুড়ে মত্ত আওয়াজ
মারমুখো এক রক্ত যুবক, রক্তপাতের স্বপ্ন মাথায়
সেই যে আমি মিছিল-ক্লান্ত একলা মানুষ
সেই যে আমি স্বপ্নে ভীষন রক্ত দেখি, টকটকে লাল রক্ত দেখি
সেই যে আমি রাত্রে চোখে ঘুম আসে না
চোখ চুজলেই মিছিল দেখি, বুলেটবিদ্ধ মানুষ দেখি
সেই যে আমি একটুখানি স্নেহের কাঙাল, মনে পড়ছে?
সেই যে আমি দাঁড়িয়েছিলাম, দ্বিধাগ্রস্ত দাঁড়িয়েছিলাম
মনে পড়ছে? সকাল, তোমার মনে পড়ছে?
তখন আমার মুঠোয় তাজা আগ্নেয়াস্ত্র
সমতার এক মন্ত্র আমার বুকের ভেতর
কিন্তু আমি দাঁড়িয়ছিলাম, দ্বিধাগ্রস্ত দাঁড়িয়েছিলাম ।
কারন আমি পথ চিনি না, হত্যাযোগ্য লোক চিনি না,
কেন আমি ভুল মানুষের খুনে আামার হাত রাঙাবো!
মনে পড়ছে সেই যে আমি দাঁড়িয়েছিলাম
একটি ভাঙা ব্রীজের উপর দাঁড়িয়েছিলাম দ্বিধাগ্রস্ত...
সেই যে আমি একটি শাদা ফুলের খোঁজে বেরিয়েছিলাম
সেই যে আমি একটা নোতুন বাড়ির খোঁজে বেরিয়েছিলাম
সেই যে আমি
পরান- জোড়া ভালোবাসার স্ব
মেঘ পিয়নের
মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভেতর
মন খারাপের দিস্তা মন খারাপ হলে কুয়াশা হয়, ব্যাকুল হলে তিস্তা। মন খারাপের খবর আসে মন খারাপের খবর আসে বন পাহাড়ের দেশে চৌকোনো সব বাক্সে যেথায় যেমন থাকসে মন খারাপের খবর পড়ে দাড়ুন ভালবেসে। মেঘের ব্যাগের ভেতর ম্যাপ রয়েছে মেঘ পিওনের পাড়ি পাকদন্ডী পথ বেয়ে তার বাগান ঘেরা বাড়ী। বাগান শেষে সদর দুয়ার, বারান্দাতে আরাম চেয়ার গালচে পাতা বিছানাতে ছোট্ট রোদের ফালি সেথায় এসে মেঘ পিয়নের সমস্ত ব্যাগ খালি। দেয়াল জুড়ে ছোট্ট রোদের ছায়া বিশালকায় নিস্পলকে ব্যাকুল চোখে তাকিয়ে আছে ঠায় কিসের অপেক্ষায় রোদের ছুড়ি ছায়ার শরীর কাটছে অবিরত রোদের বুকের ভেতর ক্ষত রোদের ছুড়ি ছায়ার শরীর কাটছে অবিরত রোদের বুকের ভেতর ক্ষত সেই বুকের থেকে টুকটুক টুক নীল কুয়াশা ঝরে আর মন খারাপের খবর আসে আকাশে মেঘ করে। সারা আকাশ জুড়ে। মেঘের দেশে রোদের বাড়ী পাহাড় কিনারায় যদি মেঘ পিয়নের ডাকে সেই ছায়ার হদিস থাকে রোদের ফালি তাকিয়ে থাকে আকুল আকাঙ্খায় কবে মেঘের পিঠে আসবে খবর বাড়ীর বারান্দায় ছোট্ট বাগানটায়।
মন খারাপের দিস্তা মন খারাপ হলে কুয়াশা হয়, ব্যাকুল হলে তিস্তা। মন খারাপের খবর আসে মন খারাপের খবর আসে বন পাহাড়ের দেশে চৌকোনো সব বাক্সে যেথায় যেমন থাকসে মন খারাপের খবর পড়ে দাড়ুন ভালবেসে। মেঘের ব্যাগের ভেতর ম্যাপ রয়েছে মেঘ পিওনের পাড়ি পাকদন্ডী পথ বেয়ে তার বাগান ঘেরা বাড়ী। বাগান শেষে সদর দুয়ার, বারান্দাতে আরাম চেয়ার গালচে পাতা বিছানাতে ছোট্ট রোদের ফালি সেথায় এসে মেঘ পিয়নের সমস্ত ব্যাগ খালি। দেয়াল জুড়ে ছোট্ট রোদের ছায়া বিশালকায় নিস্পলকে ব্যাকুল চোখে তাকিয়ে আছে ঠায় কিসের অপেক্ষায় রোদের ছুড়ি ছায়ার শরীর কাটছে অবিরত রোদের বুকের ভেতর ক্ষত রোদের ছুড়ি ছায়ার শরীর কাটছে অবিরত রোদের বুকের ভেতর ক্ষত সেই বুকের থেকে টুকটুক টুক নীল কুয়াশা ঝরে আর মন খারাপের খবর আসে আকাশে মেঘ করে। সারা আকাশ জুড়ে। মেঘের দেশে রোদের বাড়ী পাহাড় কিনারায় যদি মেঘ পিয়নের ডাকে সেই ছায়ার হদিস থাকে রোদের ফালি তাকিয়ে থাকে আকুল আকাঙ্খায় কবে মেঘের পিঠে আসবে খবর বাড়ীর বারান্দায় ছোট্ট বাগানটায়।
বৈশাখে নিজস্ব সংবাদ মহাদেব সাহা
বৈশাখে নিজস্ব সংবাদ
মহাদেব সাহা
মা আমাকে বলেছিলো- যেখানেই থাকিস তুই
বাড়ি আসবি পয়লা বোশেখে। পয়লা বোশেখ বড়ো ভালো দিন
এ দিন ঘরের ছেলে বাইরে থাকতে নেই কভু, বছরের এই একটি দিনে
আমি সিদ্ধিদাতা গণেশের পায়ে দিই
ফুলজল, কে বলবে কী করে কার বছর কাটবে,
বন্যা, ঝড় কিংবা অগ্নিকান্ড কতো কি ঘটতে পারে, তোর তো কথাই নেই
মাসে মাসে সর্দিজ্বর, বুকব্যাথা লেগেই আছে, বত্রিশ বছর বয়েস
নাগাদ এইসব চলবে তোর, জানিস খোকা, রাশিচক্র তোর ভীষণ খারপ,
যেখানেই থাকিস তুই বাড়ি আসবি পয়লা বোশেখে। সেদিন সকালে
উঠবি ঘুম থেকে, সময়মতো খাবি দাবি, ভালোয় ভালোয় কাটাবি দিনটা
যেন এমনি মঙ্গলমতো সারাটা বছর কাটে, তোকে না ছোঁয় কোনো
ঝড়ি-ঝাপটা, বিপদ-আপদ
আমি নিজ হাতে একশো-একটি বাতি জ্বলিয়ে পোড়াবো তোর
সমস্ত বালাই ।
মা তোমার এসব কথাই মনে আছে, এমনকি মনে আছে
বছরের শেষে ছুটিছাটায় বাড়ি গেলে পয়লা বোশেখ না কাটিয়ে তুমি
কিছুতেই আসতে দিতে না, বাড়ি থেকে বেরুবার সময়
আমার বুকের মধ্যে পুরে দিতে ভালো থাক তুই শুধু এইটুকু
বিশেষ সংবাদ, আমার
গন্তব্যে তুমি ছড়িয়ে দিতে দুর্ঘটনা, রোগ, শত্রুর উৎপাত থেকে
নিরাপত্তা, হায় এই
সংসার যদি মায়ের বুকের মতো স্বাস্ত্যবান হতো,
তখন আমার বৈশাখগুলি
প্রাকৃতিক দুর্যেগে কাটতো না এমন বিষণ্ন ;
এখন আমার বৈশাখ কাটে ধূলিঝড়ে জানালা দরোজা সব
বন্ধ ঘরে অন্ধকার শবাধারে শুয়ে, মাথার সমস্ত চু্ল
কেটে নেয় ভয়ের বিশাল কাঁচি, সকালে খুলিতে বুলায় হাত মেসের
গাড়ল বাবুর্চি এসে
দেয়ালে তাকিয়ে দেখি এমনি করে বছর বছর ক্যালেন্ডরে পাল্টে যায়
আমার বয়স, গোঁফদাড়ি পুষ্ট হয়, কিছু কিছু পরিচয় ঘটে
তথ্যকেন্দ্রে বসে জেনে নিই দুচারটে নতুন খবর, আবার ঘসে মেজে
উজ্জ্বল করি আমার নেমপ্লেট;
শোনো মা, তোমার সমস্ত কথা মনে আছে, বৈশাখে দোকানে হালখাতা
মহরৎ হতো, বাড়ির উঠোন ভরে খেতে দিতে কলাপাতায় ঘরের
মিষ্টান্ন, আমার জন্যে বানিয়ে রাখতে স্বসি-ক, মা তোমার হাতের দেয়া
স্বসি-ক আমি এমন লোভী দেখো নিঃশেষে খেয়ে বসে আছি, আমার মনের
সসি- আমি আজ খেয়ে বসে আছি;
এখন আমার বছর কাটে বিদেশ বিভুঁয়ে
নানাস্থানে, বেশির ভাগ হোটেলের ভাড়াটে কামরায়, স্টেশনের
ওয়েটিং রুমে, বছরে দুএকবার হাসপাতালে, কখনো কখনো পুলিশ-
ফাঁড়িতেও যাই
ইতস্ত ভবঘুরের মতো ঘুরি, ইদানীং সংবাদ সংগ্রহে
বড়ো বেশি ব্যস্ত থাকি, কেবল আমার সংবাদ আজ আমার
কাছে নিতান্ত অজ্ঞাত;
আমার বছর কাটে ধার-ঋণে, প্রত্যহ কিনি একেকটি দেশলাইর বাক্স
আমিই বুঝি না কেন আজকাল এতা বেশি দেশলাই কিনি আমি
হামেশাই বৈদ্যুতিক গোলযোগে জ্বালাতে হয় নিজের বারুদ
আমার এখন বুঝি ভালো লাগে প্রতিদিন নিজের করতলের গাঢ় অন্ধকারে
জ্বালাতে আগুন, কেননা এখন আমাকে বড়ো বেশি কষ্ট দেয় আমার
নিজের আঙুলগুলি, আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ভীষণ আঁধার;
এখন প্রায়শই মতবিরোধ, ঝগড়াঝাঁটি
করে কাটে আমার সময়, কোনো কিচুতেই দুঃখও পাইনে বড়ো, বুকের
ব্যথাটাও বোধ হয় না আজকাল আর, আমার বুকের ওপর দিয়ে প্রমাগত
তুষারঝড় হয়ে গেছে, বুঝি ভূমিকম্পে মরে গেছে
বুকের সমস্ত শহরতলী;
মা তুমি বলেছিলে পয়লা বোশেখে
বাড়ি আসবি তুই, আমার মনে আছে- আমারও
ইচ্ছে করে পয়লা বোশেখ কাটাই বাড়িতে প্রতি বছর মনে
করে রাখি সমনের বছর পয়লা বোশেখটা বাড়িতেই কাটিয়ে
আসবো, খুব সকলে উঠে দেখবো পয়লা বোশেখের সূর্যোদয়
দেখতে কেমন, কিন্তু মা সারাটা বছর কাটে, ক্যালেন্ডার পাল্টে যায়, আমার
জীবনে আর আসে না যে পয়লা বোশেখ।
নিঃশ্বাস
আজ ২৫ শে ফেব্রুয়ারি । নতুন বছর, ২০১৭।
আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্ত কোথায় বুঝলাম না।
আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্ত কোথায় বুঝলাম না।
আমি কোথাও গেলে সচরাচর রাজিব, নুর নয়ত ভাগিনারে নিয়ে যাই। কিন্ত আজ একাকা যাচ্ছি তাও ভ্যানে করে, পুরো ভ্যানে একা।
অন্য সময় হলে বসেই যেতাম। আজ আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শুইয়ে। গায়ে খেজুর পাতার পাটি জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পুরো শরীরটা মোড়ানো পাটিতে। খুব ঠান্ডা লাগছে আজ। মন চাচ্ছে টেনে একটা নিঃশ্বাস নিতে।
অন্য সময় হলে বসেই যেতাম। আজ আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শুইয়ে। গায়ে খেজুর পাতার পাটি জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পুরো শরীরটা মোড়ানো পাটিতে। খুব ঠান্ডা লাগছে আজ। মন চাচ্ছে টেনে একটা নিঃশ্বাস নিতে।
কিন্ত একি!
নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। কারণ টা কি?
ওহ, আমি তো মারা গিয়েছি।
কাল মধ্যরাতে যখন সবাই ঘুমের ঘরে ব্যাস্ত তখন কি যেন মনে হল।
সারাদিন রুমে বসে থাকতে থাকতে যখন হাপিয়ে উঠেছি। হঠাৎ ভাবলাম যাই একটু নিজের ফেলে আসা স্বৃতিময় জায়গা গুলো দেখে আসি। কেন মনে হল, কিসের টানে কিচ্ছুই বুঝলাম নাহ। মানুষের মন নাকি অদ্ভুত হয়। কখন কি চায় বোঝা যায় না। এই যেমন দুজনের কেউ কাউকে ছাড়া বাঁচতো না। কিন্ত মনের চাওয়ার পরিবর্তনের জন্য তারা দুজন দু-প্রান্তে এখন।
সারাদিন রুমে বসে থাকতে থাকতে যখন হাপিয়ে উঠেছি। হঠাৎ ভাবলাম যাই একটু নিজের ফেলে আসা স্বৃতিময় জায়গা গুলো দেখে আসি। কেন মনে হল, কিসের টানে কিচ্ছুই বুঝলাম নাহ। মানুষের মন নাকি অদ্ভুত হয়। কখন কি চায় বোঝা যায় না। এই যেমন দুজনের কেউ কাউকে ছাড়া বাঁচতো না। কিন্ত মনের চাওয়ার পরিবর্তনের জন্য তারা দুজন দু-প্রান্তে এখন।
যাই হোক, মূল ঘটনায় আসি। প্রতিদিনের মত, সেদিনো
খামার মোড় থেকে শাপলা চত্বরের দিকে আনমনে হেটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ পিছনে কি যানি বিকট শব্দ হল...........
খামার মোড় থেকে শাপলা চত্বরের দিকে আনমনে হেটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ পিছনে কি যানি বিকট শব্দ হল...........
মানুষ জন বলাবলি করছিলো "ইশ, ছেলেটার কি অবস্থা! মাথা তো পুরো ফেটে গেছে,হাত ও থেতলে গেছে!
তারপর আর কিছু মনে নেই। এই যে এখন আবার ইন্দ্রিয় কাজ করছে,তাও সপ্তম ইন্দ্রিয়। এই ইন্দ্রিয় টা শুধু মৃত্যুর পর কাজ করে। তার মানে আমি মারা গেছি। কাল রাতেই।
চলে এসেছি গন্তব্যে। রাজিব আর শাওন আমাক ধরাধরি করে নামালো আমাকে। শুইয়ে রাখলো মাটিতেই।
একি! এটা তো আমাদের মেডিকেল হাসপাতাল। আরে! সামনে তো ওটা মর্গ। তার মানে এখন আমার অটোপসি করা হবে। কেটেকুটে আমার দেহের প্রতিটা ভিসেরা আলাদা করা হবে।
কাউকে তো দেখছি না আশপাশে, নুর, রাজিব, ভাগিনা, কাহার,শাওন, মাহাবুব, ফাল্গুনি, জয়া, আকাশ, নিহার, মউ,সুজন দের খুব মনে পড়ছে। খুব একা লাগছে।
চলে এসেছি গন্তব্যে। রাজিব আর শাওন আমাক ধরাধরি করে নামালো আমাকে। শুইয়ে রাখলো মাটিতেই।
একি! এটা তো আমাদের মেডিকেল হাসপাতাল। আরে! সামনে তো ওটা মর্গ। তার মানে এখন আমার অটোপসি করা হবে। কেটেকুটে আমার দেহের প্রতিটা ভিসেরা আলাদা করা হবে।
কাউকে তো দেখছি না আশপাশে, নুর, রাজিব, ভাগিনা, কাহার,শাওন, মাহাবুব, ফাল্গুনি, জয়া, আকাশ, নিহার, মউ,সুজন দের খুব মনে পড়ছে। খুব একা লাগছে।
এই সময় নুর, রাজিব, সবুজকে খুব দরকার ছিলো। ওরা পাশে থাকলে সাহস বাড়তো। আর সব বন্ধু গুলো। ।
শসীর কথাও খুব মনে পড়ছে। সে কি জানে আমি মারা গেছি? নাহ!!! হয়ত......শুনলে অনেক কান্না করবে
শসীর কথাও খুব মনে পড়ছে। সে কি জানে আমি মারা গেছি? নাহ!!! হয়ত......শুনলে অনেক কান্না করবে
আব্বু কোথায়?রবি, লিমা, পিচ্চিটা ওরা? একবার দেখতে ইচ্ছে করছে।
পাশে কার কন্ঠ শুনছি! ওহ! ডাক্তার। আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, অটোপসি টেবিলে। আমার কস্ট হচ্ছে না, সত্যিই হচ্ছে না। যখন নিঃশ্বাস চলত তখনকার কষ্টের থেকে এখনকার কষ্ট অনেক সহজ। ডাক্তার আমার ফাইল পড়ছে, লাশের পরিচয়..............
পাশে কার কন্ঠ শুনছি! ওহ! ডাক্তার। আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, অটোপসি টেবিলে। আমার কস্ট হচ্ছে না, সত্যিই হচ্ছে না। যখন নিঃশ্বাস চলত তখনকার কষ্টের থেকে এখনকার কষ্ট অনেক সহজ। ডাক্তার আমার ফাইল পড়ছে, লাশের পরিচয়..............
রুহুল আমিন, বয়স: ২১।বাসা : ঠাকুরগাও -পীরগঞ্জ
দুজন ডোম কথা বলছে তাদের ভেতর "ছেলেটার কপাল খারাপ। জীবনের শুরুতেই শেষ হয়ে গেল।" আমি ভাবছি সবার কথা। কে কে কাঁদছে? কে ভাবছে আমাকে নিয়ে? কারো দিন কি থেমে থাকছে রুহুলের জন্য? কেউ কি আড্ডায় বসে বলছে "রুহুল কে খুব মিস করছি।"
মাহাবুব রাজিব আর ফাল্গুনি খুব ছুটা ছুটি করছে,,,,,,,,,কিভাবে আমার বডি বাসায় পাঠানো হবে। নুর সবুজকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। শাওন চুপ চাপ।
মউ, সুজন, মলি, রওসন, জয়া, নিহার, আকাশ এখনো আসে নাই
Friday, April 19, 2019
Concept
একটা সময় ছিলো যখন একটা নির্দিষ্ট ফোন নাম্বার সবসময়ই কল লিস্টের প্রথমেই থাকতো। নাম্বারটা খুঁজতে কন্টাক্ট লিস্টে বা ফোন বুকে যাওয়ার প্রয়োজন ছিলো না। সেই একই নাম্বার একটা সময় চলে যায় yesterday তে। তারপর চলে যায় আরো পেছনের তারিখে। এভাবে একটা সময় আর ডায়াল, রিসিভ বা মিস কল লিস্টেও নাম্বারটা থাকে না। নাম্বার টা কন্টাক্ট বা ফোন বুকে ঘুমিয়ে থাকে।
তারপর একটা সময় স্মৃতি তে ধুলো জমে...ঝাপসা হয়ে যায় সব অতীত। তারও অনেক পরে একটা সময় আসে যখন দেখা যায় সেই নাম্বারটা খুঁজেই পাওয়া যায় না, যে নাম্বারটা এত ভালো করে মুখস্ত ছিলো, সেই নাম্বারটার শেষের বা মাঝের কোনো সংখ্যা মনেই পড়ে না!!
কোন এক গভীর রাতে হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যায়, নির্জন ছাঁদে দাড়িয়ে থাকি একা। মাথার উপরে পূর্ণিমারচাঁদ। শিশিরসিক্ত দূর্বা ঘাসের উপরে ঝরে পরে শিউলি ফুল। তখন বুকের মধ্যে হঠাৎ মোচড় দিয়ে উঠে, একটা হাহাকার জেগে উঠে। নাম্বারটা যে মানুষটার তার ছবি মনে ভেসে উঠে। হাত বাড়ালেই যাকে ছোঁয়া যেত...চোখ মেললেই যাকে দেখা যেত, সে এখন যোজন যোজন দূরে।
দিনটা ছিল ৮ই জানুয়ারি.. মেয়েটার মনে সারাদিন ধরে প্রচণ্ড উত্তেজনা কারণ আজ তাদের প্রথম দেখা হবে। বিকেলে আবার এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেলো। মেয়েটা চারটে নাগাদ বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে। রাস্তা পেরিয়ে অটো নিয়ে গেলো স্টেশনে। যেতে যেতে তার হাজারো চিন্তা.. কেমন হবে সে, জীবনে প্রথম যাচ্ছে কোথাও বাড়িতে না জানিয়ে.. বাড়িতে জানলে কি হবে ইত্যাদি। ইতিমধ্যে গল্পের নায়ক হাজির হয়েছেন এবং সিনেমা হলের পাশের গলিতে অপেক্ষারত। মেয়েটা অটো থেকে নেমে দেখে স্টেশন এর রাস্তায় কাজ চলছে। মাটি কেটে পাশে রাখা আর তাতে বৃষ্টি পড়ে চারদিকে কাদাতে ভরা। কাদার মধ্যে সাবধানে পা ফেলে যেতে যেতে মেয়েটা ফোন করলো এবং জানালো যে সে একটি চুরিদারের উপর কমলা রঙের সয়েটার পরে এসেছে। অবশেষে দুজনের দেখা হল। ওরা স্টেশনে গিয়ে বসলো। তারপর মেয়েটা পড়তে গেলো। পড়ার শেষে দেখলো ছেলেটি তার জন্য অপেক্ষা করছে। ওরা এক সঙ্গে পথ হাঁটতে শুরু করলো। ভেবেছিল এই পথ হয়তো কখনো শেষ হবে না। কিন্তু বেশি দিন হলোনা তাদের পথ চলা। পথ আলাদা হল চিরদিনের জন্য কিন্তু কারন অজানা আজও। মেয়েটি অনেক চেষ্টা করেছে জানতে কিন্তু পারেনি। হঠাৎ একদিন অনেক রাতে ছেলেটির ফোন ব্যস্ত পেলো কিন্তু অনেক চেষ্টা করে যখন কথা হল ছেলেটি জানালো সে গান শুনছিল তাই ব্যস্ত বলেছে। মেয়েটি অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে
পারলো না। এর মধ্যে মেয়েটির ফোন নাম্বার ছড়িয়ে পড়তে লাগলো আর লোকেরা সবাই বললো ওই ছেলেটি ফোন নম্বর দিয়েছে তাদের। মেয়েটি দেখলো এভাবে তার জীবন থেমে থাকতে পারে না। তাকে এগোতে হবে। যেহেতু তার কোনো বন্ধু নেই তাই সে মেসে থাকা মেয়ে দের সঙ্গে ভাব জমালো মেসে আড্ডা দিতে যেতো। মন ভাল রাখত র খুব পড়তো। কারণ জানতো পড়ে ভালো রেজাল্ট করলে ছেলে টা খুশি হবে। কিন্তু কদিন হল ছেলেটির একটি বন্ধু জানালো যে ছেলেটি নতুন প্রেম করছে জমিয়ে। আর এসব কথার মাঝে ওই নতুন ছেলেটির সাথে মেয়েটির বন্ধুত্ব হল। এদিকে মেসের এক দিদি মেয়েটির সিম নিয়ে ইউজ করত।মেয়েটি ভালো মনে দিয়ে আসতো কিন্তু একদিন মেয়েটির বান্ধবী বারণ করলো দিদি টিকে সিম দিতে। পরে যদিও কারণ টা জেনে ছিল কিন্তু অনেক বড়ো মাসুল গুনে হয়েছিলো সারাজীবন এর জন্য। চার বছর ধরে অপেক্ষায় থেকে অপবাদ পেয়েছিলো। পুরোপুরি ভাবে শেষ হল একসঙ্গে চলার স্বপ্ন। দুবছর হল প্রেম ও করেছে কিন্তু সেই ছেলেটি তার কাছে এখনও আসে কল্পনায় স্বপ্নে। কেউ যদি স্বপ্নে চলে আসে কিভাবে আটকানো যাবে জানা নেই তার। সে চায়না তার বর্তমান কে ঠকাতে আবার এ ধরণের দিন আর স্মৃতি গুলো কে মুছে ফেলতে পারেন না। ভুলে যাওয়ার কোনো উপায় থাকলে নিশ্চয়ই সে ta ব্যবহার করত কিন্তু এখন সে কি করবে। তার je খুব কষ্ট হয় অসহায় লাগে সে আগের জন এর কাছে কোনো ভাব এই ফিরতে চায়না। কিন্তু মাঝে মাঝেই মন খারাপ করে বসে
পারলো না। এর মধ্যে মেয়েটির ফোন নাম্বার ছড়িয়ে পড়তে লাগলো আর লোকেরা সবাই বললো ওই ছেলেটি ফোন নম্বর দিয়েছে তাদের। মেয়েটি দেখলো এভাবে তার জীবন থেমে থাকতে পারে না। তাকে এগোতে হবে। যেহেতু তার কোনো বন্ধু নেই তাই সে মেসে থাকা মেয়ে দের সঙ্গে ভাব জমালো মেসে আড্ডা দিতে যেতো। মন ভাল রাখত র খুব পড়তো। কারণ জানতো পড়ে ভালো রেজাল্ট করলে ছেলে টা খুশি হবে। কিন্তু কদিন হল ছেলেটির একটি বন্ধু জানালো যে ছেলেটি নতুন প্রেম করছে জমিয়ে। আর এসব কথার মাঝে ওই নতুন ছেলেটির সাথে মেয়েটির বন্ধুত্ব হল। এদিকে মেসের এক দিদি মেয়েটির সিম নিয়ে ইউজ করত।মেয়েটি ভালো মনে দিয়ে আসতো কিন্তু একদিন মেয়েটির বান্ধবী বারণ করলো দিদি টিকে সিম দিতে। পরে যদিও কারণ টা জেনে ছিল কিন্তু অনেক বড়ো মাসুল গুনে হয়েছিলো সারাজীবন এর জন্য। চার বছর ধরে অপেক্ষায় থেকে অপবাদ পেয়েছিলো। পুরোপুরি ভাবে শেষ হল একসঙ্গে চলার স্বপ্ন। দুবছর হল প্রেম ও করেছে কিন্তু সেই ছেলেটি তার কাছে এখনও আসে কল্পনায় স্বপ্নে। কেউ যদি স্বপ্নে চলে আসে কিভাবে আটকানো যাবে জানা নেই তার। সে চায়না তার বর্তমান কে ঠকাতে আবার এ ধরণের দিন আর স্মৃতি গুলো কে মুছে ফেলতে পারেন না। ভুলে যাওয়ার কোনো উপায় থাকলে নিশ্চয়ই সে ta ব্যবহার করত কিন্তু এখন সে কি করবে। তার je খুব কষ্ট হয় অসহায় লাগে সে আগের জন এর কাছে কোনো ভাব এই ফিরতে চায়না। কিন্তু মাঝে মাঝেই মন খারাপ করে বসে
#হয়তো :
।।এক।।
- লাশকাটা ঘরের টেবিলে শোয়ার কোনো অভিজ্ঞতা আছে?
প্রশ্নটা শুনে চমকে পিছনের দিকে ফিরে তাকালাম। দেখি একটা মাঝ বয়সি লোক আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হসপিটালের ওয়ার্ড বয় সম্ভবত।
- আমাকে বলছেন?
- এখানে আপনাকে ছাড়া আর কাউকে তো আমি দেখছি না! আমার মনে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি আপনি মর্গ দর্শন করবেন।
- কি যা তা বলছেন?
লোকটা খৈনি খাওয়া দাঁত বার করে খিক্ খিক্ করে হাসলো। মনে হলো হারামীটা নিশ্চই সেই Ph.D করা ডোম। কথা শুনে মাথাটা গরম হয়ে গেলো।
তারপর সে হাসি থামিয়ে গম্ভীরভাবে বলল - রাতে এদিকে আসবেন না। আসলে মরতে হবে। আগে যারা এসেছিলো তারাও...। কেউ বাঁচেনা... আপনিও বাঁচবেন না।
লোকটা এভাবে বারণ করে গেলো কেনো? এখানে কি তবে কোনো দু'নম্বরি কাজ হয়? হয়তো আমি হটাৎ এদিকে এসে সব দেখে ফেলবো তাই আগাম সাবধান করে গেলো। না! জানতেই হবে ব্যাপারটা ঠিক কি?
এখন চলে যেতে হবে। এখনো এখানে দাড়িয়ে থাকলে লোকটা আবার আসতে পারে। তার থেকে ভালো আর একটু রাত বাড়লে আবার আসবো।
।।এক।।
- লাশকাটা ঘরের টেবিলে শোয়ার কোনো অভিজ্ঞতা আছে?
প্রশ্নটা শুনে চমকে পিছনের দিকে ফিরে তাকালাম। দেখি একটা মাঝ বয়সি লোক আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হসপিটালের ওয়ার্ড বয় সম্ভবত।
- আমাকে বলছেন?
- এখানে আপনাকে ছাড়া আর কাউকে তো আমি দেখছি না! আমার মনে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি আপনি মর্গ দর্শন করবেন।
- কি যা তা বলছেন?
লোকটা খৈনি খাওয়া দাঁত বার করে খিক্ খিক্ করে হাসলো। মনে হলো হারামীটা নিশ্চই সেই Ph.D করা ডোম। কথা শুনে মাথাটা গরম হয়ে গেলো।
তারপর সে হাসি থামিয়ে গম্ভীরভাবে বলল - রাতে এদিকে আসবেন না। আসলে মরতে হবে। আগে যারা এসেছিলো তারাও...। কেউ বাঁচেনা... আপনিও বাঁচবেন না।
লোকটা এভাবে বারণ করে গেলো কেনো? এখানে কি তবে কোনো দু'নম্বরি কাজ হয়? হয়তো আমি হটাৎ এদিকে এসে সব দেখে ফেলবো তাই আগাম সাবধান করে গেলো। না! জানতেই হবে ব্যাপারটা ঠিক কি?
এখন চলে যেতে হবে। এখনো এখানে দাড়িয়ে থাকলে লোকটা আবার আসতে পারে। তার থেকে ভালো আর একটু রাত বাড়লে আবার আসবো।
।।দুই।।
আজ সন্ধ্যা থেকেই বাইরে একটানা বৃষ্টি হয়ে চলেছে। একঘেয়ে বৃষ্টির শব্দ কেমন যেনো গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। মাঝে মাঝে বৃষ্টি থামলেই যেনো অস্বস্তি হচ্ছে। এক রাশ বিষন্নতা ধিরে ধিরে গ্রাস করছে আমাকে।
আমি অপেক্ষা করছি গভীর রাতের। রাত বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টিটাও যেনো ধরে এলো। হাতের রেডিয়াম ডায়াল ওয়ালা ঘড়িটায় তখন রাত ঠিক ১২ টা বেজে ৫০ মিনিট। এক টানা ব্যাঙ আর ঝিঁঝির ডাকে কানে তালা লাগার জোগাড়।
১ টা বাজার সাথে সাথে আমি উঠে পড়লাম। পায়ে হাটা পথ থেকে নেমে হালকা ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম মর্গের পিছনের জানালাটার দিকে। জানালার পাশে দাড়িয়ে ভিতরে উঁকি দিলাম। আলো জ্বলছে - উজ্জ্বল হলুদ আলো। সেই আলোর নিচে স্টিলের স্ট্রেচারের উপরে সাদা কাপড়ে মোড়ানো রয়েছে একটা লাশ।
আজ সন্ধ্যা থেকেই বাইরে একটানা বৃষ্টি হয়ে চলেছে। একঘেয়ে বৃষ্টির শব্দ কেমন যেনো গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। মাঝে মাঝে বৃষ্টি থামলেই যেনো অস্বস্তি হচ্ছে। এক রাশ বিষন্নতা ধিরে ধিরে গ্রাস করছে আমাকে।
আমি অপেক্ষা করছি গভীর রাতের। রাত বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টিটাও যেনো ধরে এলো। হাতের রেডিয়াম ডায়াল ওয়ালা ঘড়িটায় তখন রাত ঠিক ১২ টা বেজে ৫০ মিনিট। এক টানা ব্যাঙ আর ঝিঁঝির ডাকে কানে তালা লাগার জোগাড়।
১ টা বাজার সাথে সাথে আমি উঠে পড়লাম। পায়ে হাটা পথ থেকে নেমে হালকা ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম মর্গের পিছনের জানালাটার দিকে। জানালার পাশে দাড়িয়ে ভিতরে উঁকি দিলাম। আলো জ্বলছে - উজ্জ্বল হলুদ আলো। সেই আলোর নিচে স্টিলের স্ট্রেচারের উপরে সাদা কাপড়ে মোড়ানো রয়েছে একটা লাশ।
আমার সারা শরীরে যেনো একটা বিদ্যুৎ প্রবাহ খেলে গেলো। শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেলো একটা ঠান্ডা ভয়ের স্রোত। আর সেই সঙ্গে অনুভব করলাম পরিবেশ নিস্তব্ধ। ব্যাঙ আর সেই ঝিঁঝির ডাক আর শোনা যাচ্ছে না। মনের মধ্যে ভয়টা আরো গাঢ় হয়ে উঠতে লাগলো।
।।তিন।।
সেই লোকটা এখন দাড়িয়ে আছে স্ট্রেচারের পাশে। সামনে সারি দিয়ে সাজিয়ে রাখা ঝকঝকে যন্ত্রপাতি গুলোর দিয়ে তাকিয়ে হেসে উঠলো সে। এই অপ্রত্যাশিত হাসির দমকে আমার ঘোর লাগা ভাবটা কিছুটা কেটে গেলো।
বাইরে পায়ের শব্দ হচ্ছে। কেউ এগিয়ে আসছে ঘরটার দিকে। ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ করে দরজাটা খুলে গেলো। এখন একজন ডাক্তার আর দু'জন ঘরের মধ্যে স্ট্রেচারের সামনে। সেই লোকটার হাসিও থেমে গিয়েছে। ঘরে চার জন মানুষ নিস্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে।
সেই লোকটা এখন দাড়িয়ে আছে স্ট্রেচারের পাশে। সামনে সারি দিয়ে সাজিয়ে রাখা ঝকঝকে যন্ত্রপাতি গুলোর দিয়ে তাকিয়ে হেসে উঠলো সে। এই অপ্রত্যাশিত হাসির দমকে আমার ঘোর লাগা ভাবটা কিছুটা কেটে গেলো।
বাইরে পায়ের শব্দ হচ্ছে। কেউ এগিয়ে আসছে ঘরটার দিকে। ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ করে দরজাটা খুলে গেলো। এখন একজন ডাক্তার আর দু'জন ঘরের মধ্যে স্ট্রেচারের সামনে। সেই লোকটার হাসিও থেমে গিয়েছে। ঘরে চার জন মানুষ নিস্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে।
ডাক্তারের নির্দেশে সেই লোকটা লাশের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটু একটু করে সরাতে লাগলো লাশের উপরের সাদা চাদর। মানুষ গুলোর দিক থেকে সরে আমার চোখ চলে গেলো লাশের দিকে। আমার দৃষ্টি স্থির হয়ে আটকে গেলো মৃতদেহটার উপরে। যেনো সেখানে গভীর ঘুমে মগ্ন চল্লিশ বছর পরের আমি।
ডাক্তারবাবু রিপোর্ট প্যাড বের করলেন। তার উপরে লেখা -
"Application, Certificate and Order for Reception and Detention of a Person as a Temporary Patient and as a Chargeable Patient in an approved institution in pursuance of section 184 of the Act."
To the person in charge of BONGAON J.R.DHAR SUB DIVISION HOSPITAL.
Date : 28 July 2058
Date : 28 July 2058
"A real lover can't be stolen"
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। হাবড়া থেকে বনগাঁগামী একটা ট্রেনে বাড়ি ফিরছি। ট্রেনের ছিট্ খালি থাকলেও আমি খুব একটা বসি না। আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। গেটের সামনে দাড়িয়ে চশমার কাচটা রুমাল দিয়ে পরিষ্কার করছি। ঠিক সেই সময় ট্রেনটা একটা জোর দোলা খেলো। ছিটকে পড়লাম বাইরে। আর কিছু মনে নেই।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন চারিপাশে ঘন অন্ধকার। উঠে বসার চেষ্টা করলাম, সারা গায়ে তীব্র যন্ত্রণা। অনেক কষ্টে উঠে দাড়ালাম। এখন নিজেকে অনেক হালকা লাগছে। মনে হচ্ছে ওজনটা অনেক কমে গেছে। একটা অন্য রকম ভাললাগায় মনটা ভরে উঠলো। হটাৎ মোবাইলের কথা মনে হতেই ওটাকে চারপাশে খুঁজতে লাগলাম। না, কোথাও নেয়। আর ব্যাগও হাওয়া। হতে পারে কেউ এখানে এসেছিলো, আর ও দু'টো নিজের মনে করে নিয়ে গিয়েছে!
কি আর করা যাবে রেল লাইন ধরে হাটতে শুরু করলাম। সামনে বনগাঁ স্টেশান একেবারে নিশ্চুপ। প্লাটফর্মে ক'য়েকটা কুকুর ইতস্তত শুয়ে ঘুমাচ্ছে। চারিদিকে তাকালাম, কোথাও কেউ নেয়। এতো রাতে তো আর টোটো পাওয়া যাবে না, এখন শ্রীচরন-ই ভরসা।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন চারিপাশে ঘন অন্ধকার। উঠে বসার চেষ্টা করলাম, সারা গায়ে তীব্র যন্ত্রণা। অনেক কষ্টে উঠে দাড়ালাম। এখন নিজেকে অনেক হালকা লাগছে। মনে হচ্ছে ওজনটা অনেক কমে গেছে। একটা অন্য রকম ভাললাগায় মনটা ভরে উঠলো। হটাৎ মোবাইলের কথা মনে হতেই ওটাকে চারপাশে খুঁজতে লাগলাম। না, কোথাও নেয়। আর ব্যাগও হাওয়া। হতে পারে কেউ এখানে এসেছিলো, আর ও দু'টো নিজের মনে করে নিয়ে গিয়েছে!
কি আর করা যাবে রেল লাইন ধরে হাটতে শুরু করলাম। সামনে বনগাঁ স্টেশান একেবারে নিশ্চুপ। প্লাটফর্মে ক'য়েকটা কুকুর ইতস্তত শুয়ে ঘুমাচ্ছে। চারিদিকে তাকালাম, কোথাও কেউ নেয়। এতো রাতে তো আর টোটো পাওয়া যাবে না, এখন শ্রীচরন-ই ভরসা।
জি.আর.পি থানায় গিয়ে একটা ডায়েরি করিয়ে আসতে হবে। যদি মোবাইলের কোনো হিল্লে হয়। হাটতে শুরু করলাম থানার দিকে। থানার সামনে, রাস্তার বাঁদিকে, দাড়িয়ে থাকা একটা গাড়ির নাম্বার প্লেটের দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম। গাড়িটা আমাদের।
থানার বারান্দায় লোকনাথ ঘোষ, Officer-In-Charge -র সঙ্গে বাবা আর দু'জন দাড়িয়ে আছে। তবে কি আমাকে খুঁজতে এসেছে। বিস্ময়াভিভূত হওয়ার কিছু নেই, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু চমক আরো বাকি ছিলো। এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে।
থানার বারান্দায় লোকনাথ ঘোষ, Officer-In-Charge -র সঙ্গে বাবা আর দু'জন দাড়িয়ে আছে। তবে কি আমাকে খুঁজতে এসেছে। বিস্ময়াভিভূত হওয়ার কিছু নেই, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু চমক আরো বাকি ছিলো। এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে।
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না। একটা যান্ত্রিক ধাতব শব্দ যেন মাথাটাকে ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে। চোখের সামনে, মেঝেতে পড়ে আছে একটা মৃতদেহ, সাদা চাদরে মোড়া। চাদরের অংশে অংশে লেগে আছে চাপ চাপ রক্ত। অনাবৃত মুখে একরাশ প্রশান্তি। টেবিলের উপরে রাখা ব্যাগের থেকে বেরিয়ে আছে এক টুকরো ফ্যাকাসে গোলাপের ডাল আর ব্যাগের উপরে মোবাইলটা।
আর ঠিক তখনই কেউ পাশথেকে ফিসফিস করে বলে উঠলো, "মরার পরে, সে যে মারা গেছে এটা বুঝতে কারো কারো একটু সময় লাগে। আস্তে আস্তে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। এখন চলো আমার সঙ্গে।"
- কে? তুমি!
- হ্যাঁ! চলো নদীর পাড়টাতে গিয়ে একটু বসি।
আর ঠিক তখনই কেউ পাশথেকে ফিসফিস করে বলে উঠলো, "মরার পরে, সে যে মারা গেছে এটা বুঝতে কারো কারো একটু সময় লাগে। আস্তে আস্তে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। এখন চলো আমার সঙ্গে।"
- কে? তুমি!
- হ্যাঁ! চলো নদীর পাড়টাতে গিয়ে একটু বসি।
Thursday, April 18, 2019
প্রেমিক – জয় গোস্বামী
প্রেমিক – জয় গোস্বামী
তুমি আমাকে মেঘ ডাকবার যে বইটা দিয়েছিলে একদিন
আজ খুলতেই দেখি তার মধ্যে এক কোমর জল।
পরের পাতায় গিয়ে সে এক নদীর অংশ হয়ে দূরে বেঁকে
গেছে।
আমাকে তুমি উদ্ভিদ ভরা যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে এক পা-ও এগোনো যাচ্ছে না, এত জঙ্গল।
গাছগুলো এত বড় হয়েছে যে মাটিতে আলো আসতে
দিচ্ছে না।
তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে
সারাদিন।
এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাও
যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ
কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।
তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,
সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …
অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা
আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি
কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি!
তুমি আমাকে মেঘ ডাকবার যে বইটা দিয়েছিলে একদিন
আজ খুলতেই দেখি তার মধ্যে এক কোমর জল।
পরের পাতায় গিয়ে সে এক নদীর অংশ হয়ে দূরে বেঁকে
গেছে।
আমাকে তুমি উদ্ভিদ ভরা যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে এক পা-ও এগোনো যাচ্ছে না, এত জঙ্গল।
গাছগুলো এত বড় হয়েছে যে মাটিতে আলো আসতে
দিচ্ছে না।
তুমি আমাকে ঝর্ণা শেখবার যে বইটা দিয়েছিলে
আজ সেখানে মস্ত এক জলপ্রপাত লাফিয়ে পড়ছে
সারাদিন।
এমনকি তোমার দেওয়া পেজ-মার্কের সাদা পালকটাও
যে বইতে রেখেছিলাম, সেখানে আজ
কত সব পাখি উড়ছে, বসছে, সাঁতার কাটছে।
তোমার দেওয়া সব বই এখন মরুভূমি আর পর্বতমালা,
সব বই আজ সূর্য, সব বই দিগন্ত …
অথচ আজকেই যে আমার লাইব্রেরি দেখতে আসছে বন্ধুরা
আমার পড়াশোনা আছে কিনা জানার জন্য! তাদের আমি
কী দেখাবো? তাদের সামনে কোন মুখে দাঁড়াবো আমি!
সুনয়না ছায়ামানবী
মাঝরাতে ছায়ামানব রাতপ্রহরী আমি
ঘুমিয়ে বন্ধু আমার একান্তে হৃদয়ে
আকাশের নীল মুছে রুপালি আলো
বন্ধুগল্পে স্বপ্নমাঝে প্রদীপ তুমি জালো
যদি মেঘলা ক্ষণে আকাশের জলে
কোনো অবলা আখিজল ঝরে,
ও আমার অভিমানী কিছু অনুভুতি
জীবন থেকে হারিয়ে যেয়েও ফিরে আসে
যদি কখনো একাকী সময় কাটে
বুঝে নিও আমার অধ্যায় নিঃসঙ্গ
ইচ্ছেঘুড়ি এলোমেলো দুরে কোথাও
কোন সে সুনয়না আমায় ভালোবেসে
দুঃখের প্রহরে সুখের ছোয়ায়
বিষন্ন হৃদয়ে এক মুহূর্ত স্পর্শে
আকাশনীলা তারার মেলায় তুমি
চিরন্তন ছায়ামানবী .........
একাকি রাজপথে নিঃসঙ্গ পথচলা
পথের অন্তরালে তুমি আর তোমার ছায়া;
নিস্তব্ধ দ্রোহের মায়াজালে
শূন্যতার প্রতিশ্রুতি তুমি
অন্ধকার, চারিদিকে অন্ধকার।
চারুশিল্পের অস্পৃশ্য ছোঁয়ায়
সিক্ত হৃদয় আমার;
ধ্রুপদী নৃত্যের মায়াবি আঘাতে
ঝরে পরছে ছেলেবেলার স্বপ্নগুলো
আর তারি সাথে তুমিও।
তোমায় লেখা শেষ চিঠিটি
সময়ের বিড়ম্বনায় অসমাপ্তই রয়ে গেলো
তাই বিবর্তনের মাঝেও অসম্পূর্ণ আজ
এই ‘আমি’।
Wednesday, April 17, 2019
বিয়ের ট্রেন ফেল করা এক আরব্য বোনের গল্প!!
বিয়ের ট্রেন ফেল করা এক আরব্য বোনের গল্প!!
.
বাবার গৃহে আমি ছিলাম খুবই আদুরে মেয়ে। পাঁচ ভাইয়ের একটি মাত্র বোন বলে আমার স্নেহ-ভালোবাসা ও আদর-যত্নে কোন ত্রুটি ছিল না। সবাই আমার প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতো।আমার সকল আবদার বিনা বাক্যে পরিবারের সকলে মেনে নিতো।
.
আমার চেতনার পুরোটাই জুড়ে ছিল পড়ালেখা। লেখাপড়া ছাড়া অন্যকোন দিকে মনোযোগ দিতে আমি মোটেও রাজি হতাম না। পড়ালেখায় আমার সাফল্যও ছিল ঈর্ষণীয় পর্যায়ে। তাই সকলের কৌতূহলী দৃষ্টি আমাকে সারাক্ষণ ঘিরে রাখতো এবং সবাই আমাকে একটু কাছে পেতে চাইতো।
.
আমার সময়গুলো বরাবরের মতো বেশ ভালোই কাটছিল। সময়ের পরিক্রমায় আমি মাধ্যমিক স্তরে উত্তীর্ণ হলাম। একদিন মায়ের দেওয়া একটি সংবাদে প্রথম বারের মতো কাঁপুনি ধরল আমার হৃদয়ে। তিনি জানালেন, অমুক তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। তখন আমি কিছুটা আশ্চর্য ও অহংকার মাখা স্বরে বললাম, পরিবারের লোকেরা কি আমাকে নিয়ে তামাশা করছে? এই যে প্রস্তাব আসা শুরু হলো! এরপর থেকে এত ঘন ঘন প্রস্তাব আসতে লাগল যে, আমার অন্য বান্ধবীদের সবার মিলেও বোধ হয় এত প্রস্তাব আসতো না। একবার তো এক বান্ধবীকে গোপনে বলেই ফেললাম, মনে হচ্ছে-আমাদের শহরের সব যুবকই আমার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে, কেউ আর বাকি থাকবে না।
.
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করা পর্ন্ত প্রস্তাব আসার এই ধারা অব্যাহত থাকল। তবে এক্ষেত্রে প্রস্তাবের ধরণে কিছুটা পরিবর্ন এলো। আমি সর্বদা একই প্রশ্ন করতাম, ছেলের যোগ্যতা কী? তার মধ্যে কী কী গুণ আছে?
.
আমি আজ তোমাদের কাছে কিছুই লুকাবো না।বিভিন্ন গুণ ও বৈশিষ্টের অধিকারী তরুণেরা, বিচিত্র সব পেশার যুবকেরা এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলেরা আমার পরিবারের কাছে সম্বন্ধ পাঠাতো। বরং আমি তো এই পর্যন্ত বলবো যে, একবার আব্দুল্লাহ নামের অসাধারণ এক যুবক আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, যে জ্ঞানে-গুণে এতটা সমৃদ্ধ ছিল যে, আর দশজন পুরুষ মিলেও তার কাছে ঘেঁষতে পারবে না।তবুও আমি তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলাম। কারণ, আমি সুন্দরী, আমি মেধাবী-আমার একটা অবস্থান আছে।
.
পড়ালেখার পাট চুকিয়ে যখন কর্মজীবনে পা রাখলাম, সম্বন্ধ আসার ধারা আরও বেড়ে গেল। তবে এতে কিছুটা পরিবর্তন আসলো। যারা প্রস্তাব নিয়ে আসছে তাদের বয়স খানিকটা বেশী- তিরিশের আশেপাশে! যদিও আমার অন্তরে বিপদ ঘণ্টা বেজেই চলছিল, কিন্তু আজকের আগে কখনোই তা শুনতে পাইনি। সময় তার গতিতে বয়ে চলছে। এরই মধ্যে এমন একটি প্রস্তাব এলো, যা আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিলো। জানো সেটা কী? এমন একলোক প্রস্তাব নিয়ে আসলো, যে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে এবং তার একটি সন্তান আছে। এরুপ প্রস্তাব পেয়ে প্রথমে বড় একটি ধাক্কা খেলাম। পরক্ষণেই বললাম, বেচারা! আমার অবস্থা জানে না, আমি কে? তার জন্য আমার এক ধরণের করুণা হলো।
.
দিন যায়, সপ্তাহ গড়ায়, মাস ফুরোয়, এদিকে আমার বয়সও বাড়তে থাকে। কিন্তু সেদিকে আমার কোন খেয়াল নেই। আমি আমার কাজে নিমগ্ন। বয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে একদিকে আমার দৈহিক লাবণ্য ও কমনীয়তা কমতে থাকে; অপরদিকে ক্রমশ বড় হতে থাকে আমার কাজের চাপ ও দায়িত্বের পরিধি, চিন্তা-ভাবনায়ও আসতে থাকে বড় ধরণের পরিবর্তন। আমি সকলের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে থাকি এবং আব্দুল্লাহর মতো এক তরুণের প্রস্তাব পাওয়ার আশায় অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষার প্রহরণ গুণতে থাকি। কিন্তু আমার আশায় গুড়ে বালি! প্রবাদ আছে, পাখি উড়ে গেছে তার খাবার নিয়ে। আব্দুল্লাহ এখন চার সন্তানের বাবা আর আমি বেচারি এখনো কুমারি বুড়ি!
.
আমার বয়স এখন তিরিশের ছুঁইছুঁই। আশঙ্কাগুলো ঘনীভূত হয়ে আসছে ক্রমশ- ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে উঠছে জীবন! এই তো আমার বান্ধবী ফাতিমা, সে এখন চার সন্তানের মা। অপর বান্ধবীর কোলজুড়ে চাঁদের মতো ফুটফুটে দু’টি মেয়ে। আরেক বান্ধবী স্বামীকে নিয়ে কী যে সুখে দিন কাটাচ্ছে! অথচ, তাদের আর্থক অবস্থা একেবারেই সাধারণ। আর আমি.......! আমি আরামে দিনাতিপাত করছি। আসলে আমি আত্মপ্রবঞ্চনায় ভোগছি; নিজের সাথে মিথ্যে বলছি। সত্যিই কি আমি সুখে আছি? বিশাল জনতার ভিড়ে এক অদ্ভূত নির্জনতা আমায় ঝেঁকে বসেছে। আমার বয়সের সকল মেয়েই তো একাধিক সন্তানের মা- তারা আদরের সন্তানদের সাথে হাসাহাসি করছে, মধুর স্বরে তাদের সম্বোধন করছে।
.
এদিকে আমার চারপাশে বিচিত্র সব ফিতনা ও পরীক্ষা ভিড় করছে, আমাকে গ্রাস করে ফেলার উপক্রম করছে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আমাকে অশ্লীল ও নির্লজ্জ কাজ থেকে হিফাজত করেছেন। হয়তো এটি আমার মা-বাবার দুআ ও সুনজরের বরকতে হয়েছে।
একদিন আমি অফিস থেকে ফিরলাম। এরই মধ্যে আমার তীক্ষ্ণ বেধা ও কঠিন অধ্যবসায় কর্মক্ষেত্রে আমাকে পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের সর্বাচ্চ স্তরে। কিন্তু এই সফলতা আমার কাছে অর্থহীন মনে হয়। আমি কাজ থেকে বাসায় ফেরি দেখি, মা আমার উদ্দেশে একটি চিরকুট লিখে আমার বালিশের ওপর রেখে দিয়েছেন। তাতে লেখা, মেয়ে আমার! অমুক তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সে ভালো চাকুরি করে, আর তার বয়সও কম।তুমি সায় দিবে-যদিও তার অন্য এক স্ত্রী ও ছয়জন সন্তান রয়েছে। দিন কিন্তু চলে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করে আমাকে জানাও।
.
আমি চিরকুটটি গভীর মনোযোগে পড়লাম এবং রাগে ফেটে পড়লাম। আমি মাথার চুলের দিকে তাকালাম। মাঝে মাঝে সাদা হয়ে ওঠা চুলগুলো লুকাতে এরই মধ্যে আমি কলপ লাগাতে শুরু করেছি। ভাবতে ভাবতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। শেষ পর্যন্ত এমন একজন লোকও আমাকে প্রস্তাব দিলো?
.
আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। রেগেমেগে সেই সন্ধ্যায় আমি বাবার কাছে গেলাম। তাঁকে বললাম, কিভাবে আপনারা এমন একজন মানুষের প্রস্তাব গ্রহণ করলেন যার ছয় সন্তান আছে?
.
আমার পিতার উত্তরটি আমার অন্তরে ধারালো ছু্রির মতো বিদ্ধ হলো। তিনি বললেন, গত কয়েক মাসে আমাদের কাছে এমন বিবাহিতরা ছাড়া অন্য কেউ প্রস্তাব নিয়ে আসেনি। আমার ভয় হয়-কিছুদিন পর হয়তো এমন সময় আসবে, যখন প্রস্তাব আসাই বন্ধ হয়ে যাবে।
.
মেয়ে আমার! মুরব্বিরা একটা কথা বলতেন, মেয়েরা গোলাপের মতো-ছিঁড়তে দেরি করলে এর পাপড়িগুলো ক্রমশ শুকিয়ে আসে। আমার মনে হয়, তুমিও এই পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। মেয়ে, তোমার কাছে তো শত শত প্রস্তাব এসেছিল, তুমি একটা একটা করে সবগুলোই প্রত্যাখ্যান করেছো। ও বেশি লম্বা, সে বেশি খাটো, ওর এই দোষ, অমুকের এই সমস্যা! আর এখন.....? এমন সময় এসেছে, তুমি কাউকেই পাচ্ছ না......!
.
পরের দিন মাগরিবের পর আমি মা-বাবার সাথে কিছুক্ষণ বসলাম। লক্ষ্য করলাম, তারা আমার দিকে স্নেহ-ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমি একজন বয়স্ক কুমারী মেয়ে-যে বিয়ের ট্রেন ফেল করেছে। অথচ, ট্রেন তার চোখের সামনে তার সমবয়স্ক বান্ধবীদের নিয়ে চলে গেছে। ভাবতে ভাবতে আমি কেঁদে ফেললাম। আব্বুকে বললাম, ইস! আপনি যদি বিষয়টি সামাল দিতেন! তিনি বললেন, কিভাবে? আমি বললাম, আপনি যদি আমার হাত ধরে আপনার পছন্দের পাত্রের হাতে আমাকে তুলে দিতেন! আপনি কি আব্দুল্লাহ কে পছন্দ করতেন না? আপনি কি তার প্রশংসা করতেন না? আব্বু, আপনি যদি তখন এমনটি করতেন, তবে আমি এখন আপনাকে তিরস্কার করতাম না। হায়, আপনি যদি এর জন্য আমাকে প্রহার করতেন!! বলতে বলতে আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম।
.
জীবনের এই তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরলাম আমার মতো বোনদের কল্যাণের প্রত্যাশায়। আমি চাই না, আমার মতো করুণ পরিণতি কোন বোনের হোক...!
.
.
বাবার গৃহে আমি ছিলাম খুবই আদুরে মেয়ে। পাঁচ ভাইয়ের একটি মাত্র বোন বলে আমার স্নেহ-ভালোবাসা ও আদর-যত্নে কোন ত্রুটি ছিল না। সবাই আমার প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতো।আমার সকল আবদার বিনা বাক্যে পরিবারের সকলে মেনে নিতো।
.
আমার চেতনার পুরোটাই জুড়ে ছিল পড়ালেখা। লেখাপড়া ছাড়া অন্যকোন দিকে মনোযোগ দিতে আমি মোটেও রাজি হতাম না। পড়ালেখায় আমার সাফল্যও ছিল ঈর্ষণীয় পর্যায়ে। তাই সকলের কৌতূহলী দৃষ্টি আমাকে সারাক্ষণ ঘিরে রাখতো এবং সবাই আমাকে একটু কাছে পেতে চাইতো।
.
আমার সময়গুলো বরাবরের মতো বেশ ভালোই কাটছিল। সময়ের পরিক্রমায় আমি মাধ্যমিক স্তরে উত্তীর্ণ হলাম। একদিন মায়ের দেওয়া একটি সংবাদে প্রথম বারের মতো কাঁপুনি ধরল আমার হৃদয়ে। তিনি জানালেন, অমুক তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। তখন আমি কিছুটা আশ্চর্য ও অহংকার মাখা স্বরে বললাম, পরিবারের লোকেরা কি আমাকে নিয়ে তামাশা করছে? এই যে প্রস্তাব আসা শুরু হলো! এরপর থেকে এত ঘন ঘন প্রস্তাব আসতে লাগল যে, আমার অন্য বান্ধবীদের সবার মিলেও বোধ হয় এত প্রস্তাব আসতো না। একবার তো এক বান্ধবীকে গোপনে বলেই ফেললাম, মনে হচ্ছে-আমাদের শহরের সব যুবকই আমার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে, কেউ আর বাকি থাকবে না।
.
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করা পর্ন্ত প্রস্তাব আসার এই ধারা অব্যাহত থাকল। তবে এক্ষেত্রে প্রস্তাবের ধরণে কিছুটা পরিবর্ন এলো। আমি সর্বদা একই প্রশ্ন করতাম, ছেলের যোগ্যতা কী? তার মধ্যে কী কী গুণ আছে?
.
আমি আজ তোমাদের কাছে কিছুই লুকাবো না।বিভিন্ন গুণ ও বৈশিষ্টের অধিকারী তরুণেরা, বিচিত্র সব পেশার যুবকেরা এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলেরা আমার পরিবারের কাছে সম্বন্ধ পাঠাতো। বরং আমি তো এই পর্যন্ত বলবো যে, একবার আব্দুল্লাহ নামের অসাধারণ এক যুবক আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, যে জ্ঞানে-গুণে এতটা সমৃদ্ধ ছিল যে, আর দশজন পুরুষ মিলেও তার কাছে ঘেঁষতে পারবে না।তবুও আমি তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলাম। কারণ, আমি সুন্দরী, আমি মেধাবী-আমার একটা অবস্থান আছে।
.
পড়ালেখার পাট চুকিয়ে যখন কর্মজীবনে পা রাখলাম, সম্বন্ধ আসার ধারা আরও বেড়ে গেল। তবে এতে কিছুটা পরিবর্তন আসলো। যারা প্রস্তাব নিয়ে আসছে তাদের বয়স খানিকটা বেশী- তিরিশের আশেপাশে! যদিও আমার অন্তরে বিপদ ঘণ্টা বেজেই চলছিল, কিন্তু আজকের আগে কখনোই তা শুনতে পাইনি। সময় তার গতিতে বয়ে চলছে। এরই মধ্যে এমন একটি প্রস্তাব এলো, যা আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিলো। জানো সেটা কী? এমন একলোক প্রস্তাব নিয়ে আসলো, যে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে এবং তার একটি সন্তান আছে। এরুপ প্রস্তাব পেয়ে প্রথমে বড় একটি ধাক্কা খেলাম। পরক্ষণেই বললাম, বেচারা! আমার অবস্থা জানে না, আমি কে? তার জন্য আমার এক ধরণের করুণা হলো।
.
দিন যায়, সপ্তাহ গড়ায়, মাস ফুরোয়, এদিকে আমার বয়সও বাড়তে থাকে। কিন্তু সেদিকে আমার কোন খেয়াল নেই। আমি আমার কাজে নিমগ্ন। বয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে একদিকে আমার দৈহিক লাবণ্য ও কমনীয়তা কমতে থাকে; অপরদিকে ক্রমশ বড় হতে থাকে আমার কাজের চাপ ও দায়িত্বের পরিধি, চিন্তা-ভাবনায়ও আসতে থাকে বড় ধরণের পরিবর্তন। আমি সকলের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে থাকি এবং আব্দুল্লাহর মতো এক তরুণের প্রস্তাব পাওয়ার আশায় অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষার প্রহরণ গুণতে থাকি। কিন্তু আমার আশায় গুড়ে বালি! প্রবাদ আছে, পাখি উড়ে গেছে তার খাবার নিয়ে। আব্দুল্লাহ এখন চার সন্তানের বাবা আর আমি বেচারি এখনো কুমারি বুড়ি!
.
আমার বয়স এখন তিরিশের ছুঁইছুঁই। আশঙ্কাগুলো ঘনীভূত হয়ে আসছে ক্রমশ- ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে উঠছে জীবন! এই তো আমার বান্ধবী ফাতিমা, সে এখন চার সন্তানের মা। অপর বান্ধবীর কোলজুড়ে চাঁদের মতো ফুটফুটে দু’টি মেয়ে। আরেক বান্ধবী স্বামীকে নিয়ে কী যে সুখে দিন কাটাচ্ছে! অথচ, তাদের আর্থক অবস্থা একেবারেই সাধারণ। আর আমি.......! আমি আরামে দিনাতিপাত করছি। আসলে আমি আত্মপ্রবঞ্চনায় ভোগছি; নিজের সাথে মিথ্যে বলছি। সত্যিই কি আমি সুখে আছি? বিশাল জনতার ভিড়ে এক অদ্ভূত নির্জনতা আমায় ঝেঁকে বসেছে। আমার বয়সের সকল মেয়েই তো একাধিক সন্তানের মা- তারা আদরের সন্তানদের সাথে হাসাহাসি করছে, মধুর স্বরে তাদের সম্বোধন করছে।
.
এদিকে আমার চারপাশে বিচিত্র সব ফিতনা ও পরীক্ষা ভিড় করছে, আমাকে গ্রাস করে ফেলার উপক্রম করছে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আমাকে অশ্লীল ও নির্লজ্জ কাজ থেকে হিফাজত করেছেন। হয়তো এটি আমার মা-বাবার দুআ ও সুনজরের বরকতে হয়েছে।
একদিন আমি অফিস থেকে ফিরলাম। এরই মধ্যে আমার তীক্ষ্ণ বেধা ও কঠিন অধ্যবসায় কর্মক্ষেত্রে আমাকে পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের সর্বাচ্চ স্তরে। কিন্তু এই সফলতা আমার কাছে অর্থহীন মনে হয়। আমি কাজ থেকে বাসায় ফেরি দেখি, মা আমার উদ্দেশে একটি চিরকুট লিখে আমার বালিশের ওপর রেখে দিয়েছেন। তাতে লেখা, মেয়ে আমার! অমুক তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সে ভালো চাকুরি করে, আর তার বয়সও কম।তুমি সায় দিবে-যদিও তার অন্য এক স্ত্রী ও ছয়জন সন্তান রয়েছে। দিন কিন্তু চলে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করে আমাকে জানাও।
.
আমি চিরকুটটি গভীর মনোযোগে পড়লাম এবং রাগে ফেটে পড়লাম। আমি মাথার চুলের দিকে তাকালাম। মাঝে মাঝে সাদা হয়ে ওঠা চুলগুলো লুকাতে এরই মধ্যে আমি কলপ লাগাতে শুরু করেছি। ভাবতে ভাবতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। শেষ পর্যন্ত এমন একজন লোকও আমাকে প্রস্তাব দিলো?
.
আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। রেগেমেগে সেই সন্ধ্যায় আমি বাবার কাছে গেলাম। তাঁকে বললাম, কিভাবে আপনারা এমন একজন মানুষের প্রস্তাব গ্রহণ করলেন যার ছয় সন্তান আছে?
.
আমার পিতার উত্তরটি আমার অন্তরে ধারালো ছু্রির মতো বিদ্ধ হলো। তিনি বললেন, গত কয়েক মাসে আমাদের কাছে এমন বিবাহিতরা ছাড়া অন্য কেউ প্রস্তাব নিয়ে আসেনি। আমার ভয় হয়-কিছুদিন পর হয়তো এমন সময় আসবে, যখন প্রস্তাব আসাই বন্ধ হয়ে যাবে।
.
মেয়ে আমার! মুরব্বিরা একটা কথা বলতেন, মেয়েরা গোলাপের মতো-ছিঁড়তে দেরি করলে এর পাপড়িগুলো ক্রমশ শুকিয়ে আসে। আমার মনে হয়, তুমিও এই পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। মেয়ে, তোমার কাছে তো শত শত প্রস্তাব এসেছিল, তুমি একটা একটা করে সবগুলোই প্রত্যাখ্যান করেছো। ও বেশি লম্বা, সে বেশি খাটো, ওর এই দোষ, অমুকের এই সমস্যা! আর এখন.....? এমন সময় এসেছে, তুমি কাউকেই পাচ্ছ না......!
.
পরের দিন মাগরিবের পর আমি মা-বাবার সাথে কিছুক্ষণ বসলাম। লক্ষ্য করলাম, তারা আমার দিকে স্নেহ-ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমি একজন বয়স্ক কুমারী মেয়ে-যে বিয়ের ট্রেন ফেল করেছে। অথচ, ট্রেন তার চোখের সামনে তার সমবয়স্ক বান্ধবীদের নিয়ে চলে গেছে। ভাবতে ভাবতে আমি কেঁদে ফেললাম। আব্বুকে বললাম, ইস! আপনি যদি বিষয়টি সামাল দিতেন! তিনি বললেন, কিভাবে? আমি বললাম, আপনি যদি আমার হাত ধরে আপনার পছন্দের পাত্রের হাতে আমাকে তুলে দিতেন! আপনি কি আব্দুল্লাহ কে পছন্দ করতেন না? আপনি কি তার প্রশংসা করতেন না? আব্বু, আপনি যদি তখন এমনটি করতেন, তবে আমি এখন আপনাকে তিরস্কার করতাম না। হায়, আপনি যদি এর জন্য আমাকে প্রহার করতেন!! বলতে বলতে আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম।
.
জীবনের এই তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরলাম আমার মতো বোনদের কল্যাণের প্রত্যাশায়। আমি চাই না, আমার মতো করুণ পরিণতি কোন বোনের হোক...!
.
"শান্তিনিকেতন জানে আমার প্রথম সব কিছু...." .
"শান্তিনিকেতন জানে আমার প্রথম সব কিছু...."
.
যে সব ছাত্রছাত্রীরা শান্তিনিকেতনকে ভালোবেসেছে, তাদের ডিপার্টমেন্টকে আপন করে নিয়েছে তারা জানে বিশ্বভারতীর আনাচে কানাচে কত স্মৃতি, কত ভালোলাগা জমা আছে...।
তারা জানে এখানকার প্রত্যেকটা জায়গার একটা নিজস্ব গন্ধ আছে... নিজস্ব ছন্দ আছে। আম্রকুঞ্জে শুকনো ঝড়া পাতার উপর দিয়ে হাঁটলে পাতার যে মর্মর ধ্বনি শোনা যায় তা অন্যান্য জায়গার থেকে আলাদা, তারা সেটা পৃথক করতে পারে।
তারা জানে ছাতিম তলায় দু'দন্ড বসলে চারিপাশে যে নিস্তব্ধতা বিরাজ করে তা শহরের যান্ত্রিক কোলাহলকে কতটা বিদীর্ণ করতে পারে। তারা বাতাসে ছাতিম ফুলের গন্ধ নাকে নিয়ে বলে দিতে পারে এখন কোন ঋতু চলছে। শান্তিনিকেতনে এসেই কোন শহুরে ছেলে কাজুবাদাম, আমলকী, সোনাঝুড়ি গাছ প্রথম দেখে, তখন প্রকৃতির অপার্থিব সৌন্দর্যের বিস্ময় লেগে থাকে তার চোখে মুখে। লাল কাঁকুড়ে মাটিতে মরসুমের প্রথম বৃষ্টি পড়লে কেমন শব্দ হয় তা তারা জানে...সেই সোঁদা মাটির গন্ধে মিশে যায় বৃষ্টির দিনে হোস্টেলের ঘরে নিজের অপটু হাতে হাত পুড়িয়ে রান্না করা খিচুড়ির গন্ধ। তারা জানে শান্তিনিকেতনে বসন্তে কোকিল কীভাবে নিজস্ব ভঙ্গীমায় ডাকে, শিমুল আর পলাশ গাছ গুলো কীভাবে নিজেদের সাজিয়ে নেয়.. তারা সাক্ষী হয়ে থাকে সেই সৌন্দর্যের। কোপাইএর পাড়ে খানিক্ষন বসলেই তারা বুঝতে পারে জলের শব্দের সাথে সাথেই তাদের জীবনের সবথেকে সেরা সময়ের স্মৃতি গুলি কীভাবে একই ধ্বনিতে অনুরণিত হচ্ছে। শহরের ইট কাঠের প্রাচীর আর নাগরিক অনুশাসনে বড় হয়ে ওঠা কোন এক ছেলেকেও কীভাবে আপন করে নিতে হয় তা জানে শান্তিনিকেতন ফলে অচিরেই শান্তিনিকেতনই হয়ে ওঠে তার ফার্স্ট হোম। পাশ করে যাওয়ার বহু বছর পরে এখানে এসে এক মুহুর্তেই সে সোনাঝুড়ির সেই গাছটাকে চিনে ফেলতে পারে, যে গাছটি তার জীবনের প্রথম চুম্বনের সাক্ষী অথবা সেই চায়ের দোকানের বেঞ্চিটা যেখানে জীবনে প্রথমবার সে বন্ধুর থেকে সিগারেটের কাউন্টার নিয়েছিলো। প্রিয় মানুষের সাথে আঙুলে আঙুল জড়িয়ে অনেকটা দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার স্বপ্নের বীজ রোপনের সাক্ষী হয়ে থাকে শান্তিনিকেতনের আকাশ বাতাস পথঘাট, প্রকৃতি। এখানকার বাতাসে নিঃশ্বাস নিয়ে এক লহমায় তাদের মনে পড়ে যায় জীবনের প্রথম সব কিছু....!! সেমিস্টারের সেই মেহনতের দিনগুলি, মাঝরাত অব্ধি জেগে সিলেবাস শেষ করা, খেলার মাঠে বন্ধুর সাথে মারামারি তারপর মেসে বা হোস্টেলে ফিরে সেই প্রিয় বন্ধুরই জন্মদিন পালন... কখনও ইগোর জিতে যাওয়া, বন্ধুত্বের পরাজয়, বিচ্ছেদ, ঝগড়া, খুনসুটি আবার একসাথে দলবেঁধে পিকনিক করা এরকম কত হাজার হাজার স্মৃতি অনু-পরমানু হয়ে এখানকার আকাশে বাতাসে মিশে আছে, তা সযত্নে আগলে রেখেছে শান্তিনিকেতন। শান্তিনিকেতন তখন হয়ত মনে মনে ভাবে তোমরা আমাকে এত ভালোবেসেছো, তোমাদের সব সুখ দুঃখ আমি ধারণ করে নিলাম নিজের মধ্যে...শুধু একটাই আশা বুকে নিয়ে সে বেঁচে থাকে- তোমরা আমাকে ভুলে যেও না...বার বার ফিরে এসো আমার টানে, আমাকে ভালোবেসে। শান্তিনিকেতন কখনও কাউকে ভুলে যাবে না... বছর দশেক বাদে তুমি যদি এখানে আসো.. বুঝতে পারবে কিছুই বদলায়নি, হয়ত বদলে গেছো তুমি, তোমার চুলে পাক ধরেছে, মুখে বয়সের ছাপ পড়েছে কিন্তু শান্তিনিকেতন তোমায় ভোলেনি, এখানকার মাটিতে পা দিলেই তোমার সমস্ত সুখের স্মৃতি তোমায় ফিরিয়ে দেবে শান্তিনিকেতন... গুরুদেবের পরম ভালোবাসা যেখানে ছড়িয়ে আছে- সে যে সব হতে আপন, আমাদের শান্তিনিকেতন।❤
.
যে সব ছাত্রছাত্রীরা শান্তিনিকেতনকে ভালোবেসেছে, তাদের ডিপার্টমেন্টকে আপন করে নিয়েছে তারা জানে বিশ্বভারতীর আনাচে কানাচে কত স্মৃতি, কত ভালোলাগা জমা আছে...।
তারা জানে এখানকার প্রত্যেকটা জায়গার একটা নিজস্ব গন্ধ আছে... নিজস্ব ছন্দ আছে। আম্রকুঞ্জে শুকনো ঝড়া পাতার উপর দিয়ে হাঁটলে পাতার যে মর্মর ধ্বনি শোনা যায় তা অন্যান্য জায়গার থেকে আলাদা, তারা সেটা পৃথক করতে পারে।
তারা জানে ছাতিম তলায় দু'দন্ড বসলে চারিপাশে যে নিস্তব্ধতা বিরাজ করে তা শহরের যান্ত্রিক কোলাহলকে কতটা বিদীর্ণ করতে পারে। তারা বাতাসে ছাতিম ফুলের গন্ধ নাকে নিয়ে বলে দিতে পারে এখন কোন ঋতু চলছে। শান্তিনিকেতনে এসেই কোন শহুরে ছেলে কাজুবাদাম, আমলকী, সোনাঝুড়ি গাছ প্রথম দেখে, তখন প্রকৃতির অপার্থিব সৌন্দর্যের বিস্ময় লেগে থাকে তার চোখে মুখে। লাল কাঁকুড়ে মাটিতে মরসুমের প্রথম বৃষ্টি পড়লে কেমন শব্দ হয় তা তারা জানে...সেই সোঁদা মাটির গন্ধে মিশে যায় বৃষ্টির দিনে হোস্টেলের ঘরে নিজের অপটু হাতে হাত পুড়িয়ে রান্না করা খিচুড়ির গন্ধ। তারা জানে শান্তিনিকেতনে বসন্তে কোকিল কীভাবে নিজস্ব ভঙ্গীমায় ডাকে, শিমুল আর পলাশ গাছ গুলো কীভাবে নিজেদের সাজিয়ে নেয়.. তারা সাক্ষী হয়ে থাকে সেই সৌন্দর্যের। কোপাইএর পাড়ে খানিক্ষন বসলেই তারা বুঝতে পারে জলের শব্দের সাথে সাথেই তাদের জীবনের সবথেকে সেরা সময়ের স্মৃতি গুলি কীভাবে একই ধ্বনিতে অনুরণিত হচ্ছে। শহরের ইট কাঠের প্রাচীর আর নাগরিক অনুশাসনে বড় হয়ে ওঠা কোন এক ছেলেকেও কীভাবে আপন করে নিতে হয় তা জানে শান্তিনিকেতন ফলে অচিরেই শান্তিনিকেতনই হয়ে ওঠে তার ফার্স্ট হোম। পাশ করে যাওয়ার বহু বছর পরে এখানে এসে এক মুহুর্তেই সে সোনাঝুড়ির সেই গাছটাকে চিনে ফেলতে পারে, যে গাছটি তার জীবনের প্রথম চুম্বনের সাক্ষী অথবা সেই চায়ের দোকানের বেঞ্চিটা যেখানে জীবনে প্রথমবার সে বন্ধুর থেকে সিগারেটের কাউন্টার নিয়েছিলো। প্রিয় মানুষের সাথে আঙুলে আঙুল জড়িয়ে অনেকটা দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার স্বপ্নের বীজ রোপনের সাক্ষী হয়ে থাকে শান্তিনিকেতনের আকাশ বাতাস পথঘাট, প্রকৃতি। এখানকার বাতাসে নিঃশ্বাস নিয়ে এক লহমায় তাদের মনে পড়ে যায় জীবনের প্রথম সব কিছু....!! সেমিস্টারের সেই মেহনতের দিনগুলি, মাঝরাত অব্ধি জেগে সিলেবাস শেষ করা, খেলার মাঠে বন্ধুর সাথে মারামারি তারপর মেসে বা হোস্টেলে ফিরে সেই প্রিয় বন্ধুরই জন্মদিন পালন... কখনও ইগোর জিতে যাওয়া, বন্ধুত্বের পরাজয়, বিচ্ছেদ, ঝগড়া, খুনসুটি আবার একসাথে দলবেঁধে পিকনিক করা এরকম কত হাজার হাজার স্মৃতি অনু-পরমানু হয়ে এখানকার আকাশে বাতাসে মিশে আছে, তা সযত্নে আগলে রেখেছে শান্তিনিকেতন। শান্তিনিকেতন তখন হয়ত মনে মনে ভাবে তোমরা আমাকে এত ভালোবেসেছো, তোমাদের সব সুখ দুঃখ আমি ধারণ করে নিলাম নিজের মধ্যে...শুধু একটাই আশা বুকে নিয়ে সে বেঁচে থাকে- তোমরা আমাকে ভুলে যেও না...বার বার ফিরে এসো আমার টানে, আমাকে ভালোবেসে। শান্তিনিকেতন কখনও কাউকে ভুলে যাবে না... বছর দশেক বাদে তুমি যদি এখানে আসো.. বুঝতে পারবে কিছুই বদলায়নি, হয়ত বদলে গেছো তুমি, তোমার চুলে পাক ধরেছে, মুখে বয়সের ছাপ পড়েছে কিন্তু শান্তিনিকেতন তোমায় ভোলেনি, এখানকার মাটিতে পা দিলেই তোমার সমস্ত সুখের স্মৃতি তোমায় ফিরিয়ে দেবে শান্তিনিকেতন... গুরুদেবের পরম ভালোবাসা যেখানে ছড়িয়ে আছে- সে যে সব হতে আপন, আমাদের শান্তিনিকেতন।❤
যৌনতা_আবশ্যক
-কি গো এনেছো? আজ রাতে কিন্তু পিল নিতে পারবো না।
-হ্যাঁ এনেছি কিন্তু ফুঁটো থাকলে জানি না।
হেসে উঠল সায়ন। বিয়ের তিন বছর হল। কমলিকাও সুখে আছে। সায়ন শুধু টাকা পয়সাই নয় যৌনতা ভালবাসা সবই দিয়েছে। সংসার চলছে জলঙ্গি'র মতন। কমলিকা স্কুলে পার্টটাইম করে আর সায়ন টি.সি.এস'এ যব করে। ভাল মাইনে। দু'জনের ইনকামে বেশ ভাল ভাবেই সংসার চলে। হঠাৎ একদিন সায়ন অফিস থেকে আসার পর কমলিকা বেশ মিষ্টি হেসে বললো,
-কি গো..এই মাসে না প্রিওডসটা হয়নি.!
জুতো খুলতে খুলতে সায়ন বললো,
- কত দিন হলো?
- তা প্রায় দেড় মাস।
- ওহ..! টেস্ট করেছো?
- না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুমি বাবা হতে চলেছো।
সায়ন খবরটা শুনে খুব আনন্দিত। হা হা করে হেসে বললো,
- কন্ডমে ফুঁটো ছিল?
- ধুর ইয়ারকি মেরো না।। কি গো আমি মা হবো।। ভাবতে পারছো? আমার পেটে আমার বাচ্চা আছে। আমায় মা বলে ডাকবে।
- আর আমি বাবা।। আচ্ছা রাগি বাবা হবো না ভাল বাবা হবো?
সায়ন কমলিকা দুজনেই খুশি। সায়ন ঠিক করল পরদিন সে অফিসটা কামাই করে কমলিকাকে নিয়ে যাবে গাইনোর কাছে। কমলিকা লজ্জা পেল যখন ডক্টোর নীলিমা বললেন,
- আপনি মা হতে চলেছেন।
সায়ন ডক্টোর নীলিমাকে লজ্জিত অথচ বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
- কত দিন? কি কি করতে হবে? এখন আমি কি করবো? আমি যে বাবা হতে চলেছি...আমায় কি করতে হবে?
ডক্টোর নীলিমা সায়নের মনে অবস্থা বুঝতে পেরে বললেন,
-শান্ত হন শান্ত হন। এখন আপনার কাজ বউ এবং আপনার সন্তানের দেখাশোনা করা। এই ওষুধ , প্রেশক্রিপসন। সবথেকে ইনপরটেন্ট কথা সায়ন বাবু ,"এই কয়েক মাস সেক্সটাকে কন্ট্রোল করতে হবে।
সায়ন সবিনয়ে উত্তর দিল "অবশ্যই" বলে ডাক্টোরের সামনেই কমলিকার মাথায় একটা চুমু দিল বাড়ির পথে।
রাত হলো। গত রাতেও নৃশংস যৌনতা চলেছে বিছানায়। বিছানা থেকে উঠছে বীর্যের গন্ধ। সায়ন রাতে কমলিকার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো,
- ও সোনা! একটু !
কমলিকা হেসে বললো,
- কি একটু! ডক্টোর কি বলল শোনো নি? এই ক'দিন হবে না।
-আচ্ছা চুমু খাই? নাইটিটা একটু নিচে নামাই?
কমলিকারও ইচ্ছা করছে সায়নের মত একটা সুপুরুষের ছোঁয়া পেতে। তাই হেসে বললো,
- আচ্ছা। কোমর ওবধি। তার নিচে না।
রাত কাটলো পরদিন সেই অফিস । সায়ন গেল টি.সি.এস-এ আর কমলিকা স্কুলে। রাতে অফিস থেকে ফিরে কথা হলো। রাতে খাবার পর শুতে যাবে,কমলিকা সায়নের ব্যাগ গোছাতে গিয়ে খুঁজে পেল কন্ডোমের প্যাকেট,স্ট্রবেরি ফ্লেবার।
- কি গো কন্ডোম কেন কিনেছো?
- ওহঃ সরি সরি। এতদিনের অভ্যাস তাই।
কমলিকা সংসার করছে তিন বছর হলো সে জানে যে , সায়ন বলতে পারছে না আসল কথাটা। সেরাতেও চুমু খেয়ে শুয়ে পরলো সায়ন। কমলিকা আগের মতন আর আদর করে না। সায়ন সারাদিন যৌনজ্বালায় ছটফট করে। খুঁটি নাটিতে ঝাগড়া বেঁধে যায়। সায়ন চায় ছেলে হোক , কমলিকা চায় মেয়ে। বিছানায় দুরত্ব বাড়তে থাকে। ঠিক পাঁচ মাস পরে, কমলিকা শোয় বিছানার একদিকে , অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে শোয় সায়ন।
রাতে যৌনতার শব্দগুলো বদলে আসলো কান্নার শব্দ। বাচ্চা হবার আগে মেয়েদের সাইকোলজিকাল একটা আমূল পরিবর্তন আসে সেটা কি করে বুঝবে একটা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বাড়তে থাকলো দূরত্ব। মাঝে মাঝে রাতে বাড়ি ফেরে না সায়ন। ছ'মাসের মাথায় পেটটা বেশ ফুলে উঠলো কমলিকার। এক রবিবার সায়নের জামা কাঁচতে গিয়ে কমলিকা কলারের কাছে লিপ্টিকের দাগ ও একটা ফিমেল পারফিউমের গন্ধ আবিষ্কার করলো। কেমন যেন চুপ মেরে গেল কমলিকা। সেদিন দুপুরে ফোলা পেটটা নিয়ে বিছানায় বসে আছে কমলিকা আর সায়ন তাঁর দিকে পিঠ ফিরিয়ে আয়নায় চুল আচরাচ্ছে। সায়নের পিঠে নখের আঁচড়ের দাগ স্পষ্ট হয়ে উঠলো। কমলিকা একভাবে তাকিয়ে আঁচড়গুলোর দিকে। চোখ থেকে বড় কষ্টে বড় দুঃখে একফোঁটা নোনা জল বেড়িয়ে,গড়িয়ে পরতে লাগলো গাল বেয়ে। আম্লান গলায় কমলিকা সায়নকে জিজ্ঞাসা করলো,
- কি গো..বাচ্চাটা নষ্ট করা যাবে? আমি মা ডাক শুনতে চাই না। অ্যাবরসন করা যাবে?
সায়ন কমলিকার একথায় রেগে গিয়ে বলল,
- কেন? বাচ্চাটা কি শুধুই তোমার? বাচ্চাটা আমারও।এত স্যাক্রিফাইস করছি বাচ্চাটার জন্য আর তুমি আজ বাচ্চা নষ্ট করার কথা বলছো?
কমলিকা চেঁচিয়ে কেঁদে বললো,
- স্যাক্রিফাইস মানে? আমি প্রেগনেন্ট..পেটে ছ'মাসের বাচ্চা আমার..৪ মাস শুধু *** দি নি বলে তুমি বলছো স্যক্রিফাইস করছো তাও আবার আমার প্রেগনেন্সির সময়।
সায়ন চেঁচিয়ে বললো,
- একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো,যৌনতা বাদে ভালবাসা হয় না।
কমলিকা হেসে বললো,
- তবে তো তুমি আজকাল অনেকের ভালবাসা পাচ্ছো। নিজের শরীরের খিদে মেটাতে রাতে অন্য মেয়ের সাথে রাত কাটাচ্ছ।
- মানেটা কী?
কমলিকা ফোলা পেট নিয়েই মেঝের গয়ে গা এলিয়ে, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
- তুমি জান, আমি তোমার জামায় অন্য মেয়ের লিপস্টিকের দাগ পেয়েছি?বাচ্চা বড়ো হয়ে এমন বাবাকে শ্রদ্ধা করবে তো? বাবার পিঠে অন্য মহিলার আঁচড়ের দাগ মানবে তো তোমার ছেলে?
সায়ন চমকে গিয়ে বললো,
- অসম্ভব। কী বলছো এসব? আমি এমনটা করবো তুমি ভাবলে কী করে?
কমলিকা চোখ ভরা জল নিয়ে সায়নের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
- তুমি স্বীকার করো। আমি কিচ্ছু বলবো না। প্রমিস । আমায় প্লিজ ঠকিও না। তোমায় খুব ভালবাসি।
কমলিকার এমন কথা আর কান্না শুনে যেন স্বীকার করতে গিয়েও করতে পারলো না সায়ন এবং স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিল এসব কমলিকার মনের ধারনা। খাওয়া ঘুম বন্ধ হয়ে গেল কমলিকার। হতাসা,ডিপ্রেসন যেন আঁটকে ধরলো তাকে।
আলাদা হয়ে গেল দুটো বিছানা। আলাদা হয়ে গেল দুটো ঘর। কমলিকা ঠিক করে কথা বলে না সায়নের সাথে। সায়ন বুঝতে পারলো সে অন্যায় করছে । কিন্তু স্বীকার কোন মতে করা যাবে না।
সায়ন ভাবলো তার থেকে অ্যফেয়ার্স বন্ধ করা যেতে পারে। কথা বন্ধ দুজনের।অবশ্য দিনের শেষে কমলিকা সায়নের জামাটা শুঁকতে ভুলতো না। অন্য কোন পারফিউমের গন্ধ নেই তো? বিশ্বাস আজব জিনিস,চলে গেলে ফেরানো মুশকিল।
এক রাতে সায়ন ভাবল একমাস হয়ে গেল,যৌনতা থেকে দুরে আছে সে। আর যেন পারছে না সামলাতে নিজেকে।
ল্যপিতে পর্ন সাইট সার্চ করতে দেখলো,সব কটা পর্ন সাইট বন্ধ। সরকার বন্ধ করে দিয়েছে । সায়ন ভাগ্যকে দোষ দিয়ে হেসে উঠল ফিনকি দিয়ে।
হঠাৎ বডি ম্যাসেজের একটা বিজ্ঞাপন চোখে পরতে,বিজ্ঞাপন থেকে নম্বর নিয়ে একটা প্রস্টেটিউটের সাথে কথা বললো। দেখা করার সময় ঠিক হল অফিস ছুটির পর,বিকেল পাঁচটা.।.
অফিস ছুটির পর দ্যাখাও করলো ।দামি একটি হোটেলে জামা খুলতে খুলতে সায়ন বললো,
- শোন, পিঠে একফোঁটাও যেন আঁচড় না পরে।
উক্ত মহিলা ব্যাঙ্গ করে বললো,
- কেন বউ বুঝে যাবে ?
এটা সায়ন রাগে ভয়ে মহিলাকে এক চড় মারতে মহিলা বললো,
- শোন তোর মতো অনেক দেখেছি। নে তুই তোর দু'হাজার টাকা। আমিও তোকে শরীর দেবো না।
হতভম্ব সায়ন। নিজের উপর যেন ঘৃণা হচ্ছে তার। বাড়ি গেল সায়ন। দরজা খুলে দেখে কমলিকা ফোনে কার সাথে যেন হেসে হেসে কথা বলছে।
সায়ন রাতে দরজার বাইরে আঁড়ি পেতে শুনলো। সারা রাত কমলিকা কার সাথে যেন কথা বলে । এখন ফোনটা একটুও হাতছাড়া করে না । সায়ন কমলিকার মুখে স্কুলের এক কলিগের নাম বেশ কয়েকবার শুনেছে। তার সাথেই কথা বলছে না তো?
কমলিকার আর মাত্র একমাস বাকি ডেলিভারির। সায়ন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে ইতিমধ্যে।
সায়ন একদিন মনে সাহস এনে বললো,
- কমলিকা কিছু কথা ছিল।
ফোন কানে দিয়েই কমলিকা হেসে বললো,
- বলো।
- ফোনটা রাখা যাবে?
-তুমি বলার হলে বলো।
- আমি তোমার সাথে খুব খারাপ করেছি। আমার অ্যাফেয়ার্স ছিল। আমি যৌনতায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম । স্বীকার করছি কিন্তু এখন আমি কিচ্ছু করি না। আমায় একটা বার ক্ষমা করতে পারবে? আমি শুধু ভাল বাবা হতে চাই।
কমলিকা বিজয়ের হাসি হেসে বললো,
- এখন তোমার খারাপ লাগছে,আমি সারাদিন ফোনে কথা বলছি বলে। কি তাইতো?
- হ্যাঁ। সরি । ক্ষমা করে দাও একবার ।
- আমার ফোনটা চেয়েছিলে না তুমি? এই নাও।
- না ঠিকাছে।
- লজ্জা পেতে হবে না। নাও
সায়ন ফোন নিয়ে দেখলো ফোনে কোন সিম নেই। আসলে কমলিকা ফোন করার নাটক করছিল যাতে সায়নের খারাপ লাগে। কমলিকা আসলে বোঝাতে চেয়েছিল ভালবাসার অর্থ। গৌতম বুদ্ধও বলে গেছেন ভালবাসার অপর নাম স্যাক্রিফাইস।
সায়ন ফোনটা দেখে কি বলবে বুঝতে পারছে না, হঠাৎ প্রবল প্রসব ব্যাথা উঠলো কমলিকার । কিন্তু এখনও তো এক মাস বাকি ডেলিভারির । হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল দ্রুত। ও.টি র লাল আলোটা জ্বলে উঠলো। নিজের উপর রাগে দুঃখে ফেঁটে পরলো সায়ন। নিজেকে দোষারপ করলো বারংবার। অপেক্ষা আর অপেক্ষা। সায়নকে সত্যি খুব ভালবাসে কমলিকা। ওর কিছু হবে না তো? বাচ্চাটা ঠিক থাকবে তো? মাথায় হাজার চিন্তা যেন ফুটবল খেলছে। ঘন্টা খানেক পর ও.টি থেকে বেড়িয়ে ডক্টর বললো,
- সায়ন বাবু বাচ্চাকে বাঁচাতে পেরেছি কিন্তু সরি কমলিকা দেবীকে বঁচাতে পারলাম না।
পাথর হয়ে গেল সব..কমলিকা আর নেই...কান্নায় ফেঁটে পরলো সায়ন..যৌনতা কেড়ে নিল ভালবাসাকে । আসলে ভালবাসার পরিনতি কখনো ভালো হয় না। ...মৃত্যু অনিবার্য। অবশ্য কমলিকার মেয়ে হয়েছে যেমনটা সে চেয়ছিল। মেয়ের নাম দিয়েছে, 'ভূমিকা'। তাকে সম্বল করে বেঁচে আছে সায়ন। ভূমিকার মধ্যেই কমলিকাকে খুঁজে পায় সে। যে ভূমিকাকে নিয়ে এত কিছু হল,এমনকি অ্যাবর্সনের কথাও উঠেছিল সেই ভূমিকাই হল সায়নের বাঁচবার কারণ। কমলিকার সাথে যৌনতাও চলে গেল সায়নের জীবন থেকে,এল নতুন ভূমিকা ।
-হ্যাঁ এনেছি কিন্তু ফুঁটো থাকলে জানি না।
হেসে উঠল সায়ন। বিয়ের তিন বছর হল। কমলিকাও সুখে আছে। সায়ন শুধু টাকা পয়সাই নয় যৌনতা ভালবাসা সবই দিয়েছে। সংসার চলছে জলঙ্গি'র মতন। কমলিকা স্কুলে পার্টটাইম করে আর সায়ন টি.সি.এস'এ যব করে। ভাল মাইনে। দু'জনের ইনকামে বেশ ভাল ভাবেই সংসার চলে। হঠাৎ একদিন সায়ন অফিস থেকে আসার পর কমলিকা বেশ মিষ্টি হেসে বললো,
-কি গো..এই মাসে না প্রিওডসটা হয়নি.!
জুতো খুলতে খুলতে সায়ন বললো,
- কত দিন হলো?
- তা প্রায় দেড় মাস।
- ওহ..! টেস্ট করেছো?
- না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুমি বাবা হতে চলেছো।
সায়ন খবরটা শুনে খুব আনন্দিত। হা হা করে হেসে বললো,
- কন্ডমে ফুঁটো ছিল?
- ধুর ইয়ারকি মেরো না।। কি গো আমি মা হবো।। ভাবতে পারছো? আমার পেটে আমার বাচ্চা আছে। আমায় মা বলে ডাকবে।
- আর আমি বাবা।। আচ্ছা রাগি বাবা হবো না ভাল বাবা হবো?
সায়ন কমলিকা দুজনেই খুশি। সায়ন ঠিক করল পরদিন সে অফিসটা কামাই করে কমলিকাকে নিয়ে যাবে গাইনোর কাছে। কমলিকা লজ্জা পেল যখন ডক্টোর নীলিমা বললেন,
- আপনি মা হতে চলেছেন।
সায়ন ডক্টোর নীলিমাকে লজ্জিত অথচ বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
- কত দিন? কি কি করতে হবে? এখন আমি কি করবো? আমি যে বাবা হতে চলেছি...আমায় কি করতে হবে?
ডক্টোর নীলিমা সায়নের মনে অবস্থা বুঝতে পেরে বললেন,
-শান্ত হন শান্ত হন। এখন আপনার কাজ বউ এবং আপনার সন্তানের দেখাশোনা করা। এই ওষুধ , প্রেশক্রিপসন। সবথেকে ইনপরটেন্ট কথা সায়ন বাবু ,"এই কয়েক মাস সেক্সটাকে কন্ট্রোল করতে হবে।
সায়ন সবিনয়ে উত্তর দিল "অবশ্যই" বলে ডাক্টোরের সামনেই কমলিকার মাথায় একটা চুমু দিল বাড়ির পথে।
রাত হলো। গত রাতেও নৃশংস যৌনতা চলেছে বিছানায়। বিছানা থেকে উঠছে বীর্যের গন্ধ। সায়ন রাতে কমলিকার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো,
- ও সোনা! একটু !
কমলিকা হেসে বললো,
- কি একটু! ডক্টোর কি বলল শোনো নি? এই ক'দিন হবে না।
-আচ্ছা চুমু খাই? নাইটিটা একটু নিচে নামাই?
কমলিকারও ইচ্ছা করছে সায়নের মত একটা সুপুরুষের ছোঁয়া পেতে। তাই হেসে বললো,
- আচ্ছা। কোমর ওবধি। তার নিচে না।
রাত কাটলো পরদিন সেই অফিস । সায়ন গেল টি.সি.এস-এ আর কমলিকা স্কুলে। রাতে অফিস থেকে ফিরে কথা হলো। রাতে খাবার পর শুতে যাবে,কমলিকা সায়নের ব্যাগ গোছাতে গিয়ে খুঁজে পেল কন্ডোমের প্যাকেট,স্ট্রবেরি ফ্লেবার।
- কি গো কন্ডোম কেন কিনেছো?
- ওহঃ সরি সরি। এতদিনের অভ্যাস তাই।
কমলিকা সংসার করছে তিন বছর হলো সে জানে যে , সায়ন বলতে পারছে না আসল কথাটা। সেরাতেও চুমু খেয়ে শুয়ে পরলো সায়ন। কমলিকা আগের মতন আর আদর করে না। সায়ন সারাদিন যৌনজ্বালায় ছটফট করে। খুঁটি নাটিতে ঝাগড়া বেঁধে যায়। সায়ন চায় ছেলে হোক , কমলিকা চায় মেয়ে। বিছানায় দুরত্ব বাড়তে থাকে। ঠিক পাঁচ মাস পরে, কমলিকা শোয় বিছানার একদিকে , অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে শোয় সায়ন।
রাতে যৌনতার শব্দগুলো বদলে আসলো কান্নার শব্দ। বাচ্চা হবার আগে মেয়েদের সাইকোলজিকাল একটা আমূল পরিবর্তন আসে সেটা কি করে বুঝবে একটা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বাড়তে থাকলো দূরত্ব। মাঝে মাঝে রাতে বাড়ি ফেরে না সায়ন। ছ'মাসের মাথায় পেটটা বেশ ফুলে উঠলো কমলিকার। এক রবিবার সায়নের জামা কাঁচতে গিয়ে কমলিকা কলারের কাছে লিপ্টিকের দাগ ও একটা ফিমেল পারফিউমের গন্ধ আবিষ্কার করলো। কেমন যেন চুপ মেরে গেল কমলিকা। সেদিন দুপুরে ফোলা পেটটা নিয়ে বিছানায় বসে আছে কমলিকা আর সায়ন তাঁর দিকে পিঠ ফিরিয়ে আয়নায় চুল আচরাচ্ছে। সায়নের পিঠে নখের আঁচড়ের দাগ স্পষ্ট হয়ে উঠলো। কমলিকা একভাবে তাকিয়ে আঁচড়গুলোর দিকে। চোখ থেকে বড় কষ্টে বড় দুঃখে একফোঁটা নোনা জল বেড়িয়ে,গড়িয়ে পরতে লাগলো গাল বেয়ে। আম্লান গলায় কমলিকা সায়নকে জিজ্ঞাসা করলো,
- কি গো..বাচ্চাটা নষ্ট করা যাবে? আমি মা ডাক শুনতে চাই না। অ্যাবরসন করা যাবে?
সায়ন কমলিকার একথায় রেগে গিয়ে বলল,
- কেন? বাচ্চাটা কি শুধুই তোমার? বাচ্চাটা আমারও।এত স্যাক্রিফাইস করছি বাচ্চাটার জন্য আর তুমি আজ বাচ্চা নষ্ট করার কথা বলছো?
কমলিকা চেঁচিয়ে কেঁদে বললো,
- স্যাক্রিফাইস মানে? আমি প্রেগনেন্ট..পেটে ছ'মাসের বাচ্চা আমার..৪ মাস শুধু *** দি নি বলে তুমি বলছো স্যক্রিফাইস করছো তাও আবার আমার প্রেগনেন্সির সময়।
সায়ন চেঁচিয়ে বললো,
- একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো,যৌনতা বাদে ভালবাসা হয় না।
কমলিকা হেসে বললো,
- তবে তো তুমি আজকাল অনেকের ভালবাসা পাচ্ছো। নিজের শরীরের খিদে মেটাতে রাতে অন্য মেয়ের সাথে রাত কাটাচ্ছ।
- মানেটা কী?
কমলিকা ফোলা পেট নিয়েই মেঝের গয়ে গা এলিয়ে, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
- তুমি জান, আমি তোমার জামায় অন্য মেয়ের লিপস্টিকের দাগ পেয়েছি?বাচ্চা বড়ো হয়ে এমন বাবাকে শ্রদ্ধা করবে তো? বাবার পিঠে অন্য মহিলার আঁচড়ের দাগ মানবে তো তোমার ছেলে?
সায়ন চমকে গিয়ে বললো,
- অসম্ভব। কী বলছো এসব? আমি এমনটা করবো তুমি ভাবলে কী করে?
কমলিকা চোখ ভরা জল নিয়ে সায়নের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
- তুমি স্বীকার করো। আমি কিচ্ছু বলবো না। প্রমিস । আমায় প্লিজ ঠকিও না। তোমায় খুব ভালবাসি।
কমলিকার এমন কথা আর কান্না শুনে যেন স্বীকার করতে গিয়েও করতে পারলো না সায়ন এবং স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিল এসব কমলিকার মনের ধারনা। খাওয়া ঘুম বন্ধ হয়ে গেল কমলিকার। হতাসা,ডিপ্রেসন যেন আঁটকে ধরলো তাকে।
আলাদা হয়ে গেল দুটো বিছানা। আলাদা হয়ে গেল দুটো ঘর। কমলিকা ঠিক করে কথা বলে না সায়নের সাথে। সায়ন বুঝতে পারলো সে অন্যায় করছে । কিন্তু স্বীকার কোন মতে করা যাবে না।
সায়ন ভাবলো তার থেকে অ্যফেয়ার্স বন্ধ করা যেতে পারে। কথা বন্ধ দুজনের।অবশ্য দিনের শেষে কমলিকা সায়নের জামাটা শুঁকতে ভুলতো না। অন্য কোন পারফিউমের গন্ধ নেই তো? বিশ্বাস আজব জিনিস,চলে গেলে ফেরানো মুশকিল।
এক রাতে সায়ন ভাবল একমাস হয়ে গেল,যৌনতা থেকে দুরে আছে সে। আর যেন পারছে না সামলাতে নিজেকে।
ল্যপিতে পর্ন সাইট সার্চ করতে দেখলো,সব কটা পর্ন সাইট বন্ধ। সরকার বন্ধ করে দিয়েছে । সায়ন ভাগ্যকে দোষ দিয়ে হেসে উঠল ফিনকি দিয়ে।
হঠাৎ বডি ম্যাসেজের একটা বিজ্ঞাপন চোখে পরতে,বিজ্ঞাপন থেকে নম্বর নিয়ে একটা প্রস্টেটিউটের সাথে কথা বললো। দেখা করার সময় ঠিক হল অফিস ছুটির পর,বিকেল পাঁচটা.।.
অফিস ছুটির পর দ্যাখাও করলো ।দামি একটি হোটেলে জামা খুলতে খুলতে সায়ন বললো,
- শোন, পিঠে একফোঁটাও যেন আঁচড় না পরে।
উক্ত মহিলা ব্যাঙ্গ করে বললো,
- কেন বউ বুঝে যাবে ?
এটা সায়ন রাগে ভয়ে মহিলাকে এক চড় মারতে মহিলা বললো,
- শোন তোর মতো অনেক দেখেছি। নে তুই তোর দু'হাজার টাকা। আমিও তোকে শরীর দেবো না।
হতভম্ব সায়ন। নিজের উপর যেন ঘৃণা হচ্ছে তার। বাড়ি গেল সায়ন। দরজা খুলে দেখে কমলিকা ফোনে কার সাথে যেন হেসে হেসে কথা বলছে।
সায়ন রাতে দরজার বাইরে আঁড়ি পেতে শুনলো। সারা রাত কমলিকা কার সাথে যেন কথা বলে । এখন ফোনটা একটুও হাতছাড়া করে না । সায়ন কমলিকার মুখে স্কুলের এক কলিগের নাম বেশ কয়েকবার শুনেছে। তার সাথেই কথা বলছে না তো?
কমলিকার আর মাত্র একমাস বাকি ডেলিভারির। সায়ন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে ইতিমধ্যে।
সায়ন একদিন মনে সাহস এনে বললো,
- কমলিকা কিছু কথা ছিল।
ফোন কানে দিয়েই কমলিকা হেসে বললো,
- বলো।
- ফোনটা রাখা যাবে?
-তুমি বলার হলে বলো।
- আমি তোমার সাথে খুব খারাপ করেছি। আমার অ্যাফেয়ার্স ছিল। আমি যৌনতায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম । স্বীকার করছি কিন্তু এখন আমি কিচ্ছু করি না। আমায় একটা বার ক্ষমা করতে পারবে? আমি শুধু ভাল বাবা হতে চাই।
কমলিকা বিজয়ের হাসি হেসে বললো,
- এখন তোমার খারাপ লাগছে,আমি সারাদিন ফোনে কথা বলছি বলে। কি তাইতো?
- হ্যাঁ। সরি । ক্ষমা করে দাও একবার ।
- আমার ফোনটা চেয়েছিলে না তুমি? এই নাও।
- না ঠিকাছে।
- লজ্জা পেতে হবে না। নাও
সায়ন ফোন নিয়ে দেখলো ফোনে কোন সিম নেই। আসলে কমলিকা ফোন করার নাটক করছিল যাতে সায়নের খারাপ লাগে। কমলিকা আসলে বোঝাতে চেয়েছিল ভালবাসার অর্থ। গৌতম বুদ্ধও বলে গেছেন ভালবাসার অপর নাম স্যাক্রিফাইস।
সায়ন ফোনটা দেখে কি বলবে বুঝতে পারছে না, হঠাৎ প্রবল প্রসব ব্যাথা উঠলো কমলিকার । কিন্তু এখনও তো এক মাস বাকি ডেলিভারির । হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল দ্রুত। ও.টি র লাল আলোটা জ্বলে উঠলো। নিজের উপর রাগে দুঃখে ফেঁটে পরলো সায়ন। নিজেকে দোষারপ করলো বারংবার। অপেক্ষা আর অপেক্ষা। সায়নকে সত্যি খুব ভালবাসে কমলিকা। ওর কিছু হবে না তো? বাচ্চাটা ঠিক থাকবে তো? মাথায় হাজার চিন্তা যেন ফুটবল খেলছে। ঘন্টা খানেক পর ও.টি থেকে বেড়িয়ে ডক্টর বললো,
- সায়ন বাবু বাচ্চাকে বাঁচাতে পেরেছি কিন্তু সরি কমলিকা দেবীকে বঁচাতে পারলাম না।
পাথর হয়ে গেল সব..কমলিকা আর নেই...কান্নায় ফেঁটে পরলো সায়ন..যৌনতা কেড়ে নিল ভালবাসাকে । আসলে ভালবাসার পরিনতি কখনো ভালো হয় না। ...মৃত্যু অনিবার্য। অবশ্য কমলিকার মেয়ে হয়েছে যেমনটা সে চেয়ছিল। মেয়ের নাম দিয়েছে, 'ভূমিকা'। তাকে সম্বল করে বেঁচে আছে সায়ন। ভূমিকার মধ্যেই কমলিকাকে খুঁজে পায় সে। যে ভূমিকাকে নিয়ে এত কিছু হল,এমনকি অ্যাবর্সনের কথাও উঠেছিল সেই ভূমিকাই হল সায়নের বাঁচবার কারণ। কমলিকার সাথে যৌনতাও চলে গেল সায়নের জীবন থেকে,এল নতুন ভূমিকা ।
Tuesday, April 16, 2019
হ্যালো হিমু..........!!
হঠাৎ সেদিন কিছু না জানিয়ে রংপুর থেকে বাসায় চলে যায় রুপা। হিমু অনেকবার ফোনে চেষ্টা করেও পায়নি,
বাসায় যাওয়ার পরথেকেই তার ফোনটা বন্ধ বলছে। হিমুর প্রথমে মনে হইছিলো যে রুপার বান্ধবীদের কাছে তার বাসার ঠিকানা টা যোগাড় করে রুপার সাথে দেখা করবে। পরের কয়েকদিন অন্য কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ায় রুপার বাসার ঠিকানা আর যোগার করা হয়নি।
বাসায় যাওয়ার পরথেকেই তার ফোনটা বন্ধ বলছে। হিমুর প্রথমে মনে হইছিলো যে রুপার বান্ধবীদের কাছে তার বাসার ঠিকানা টা যোগাড় করে রুপার সাথে দেখা করবে। পরের কয়েকদিন অন্য কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ায় রুপার বাসার ঠিকানা আর যোগার করা হয়নি।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে বিছানায় ক্লান্ত দেহ খানি এলিয়ে দিয়ে আরাম করচ্ছিলো হিমু। ফোনটা বেজে উটলো কয়েকবার, একপ্রকার বিরক্ত হয়েই ফোন তুললো হিমু। অপর পাশ থেকে
রুপার গলা ভেসে আসলো.....
: হ্যালো... হ্যালো হিমু!!
: হ্যা রুপা বলো। কই হারিয়ে গেছিলা তুমি কিছু
না যানিয়ে?
: হিমু, বেশী কথা বলার সময় নাই,
তুমি আজ বিকেলে ফ্রী আছো?
: হুম, বিকেলে ফ্রী আছি।
: আচ্ছা শোন, আজ সন্ধায় আমার বিয়ে,!! রংপুর থেকে আমার কজন বান্ধবী আসবে। তুমি চাইলে ওদের সাথেও আসতে পার। তাছাড়া, আমি যে ম্যানিব্যাগ টা তোমাক গিফট করছিলাম... ঐটার ভিতর পাশে একটা ছোট্ট কাগজে আমদের বাসার ঠিকানা লিখা আছে.... চলে এসো বিকেলে।
( বাই, বলে দুম করে লাইনটা কেটে দিলো রুপা)
রুপার গলা ভেসে আসলো.....
: হ্যালো... হ্যালো হিমু!!
: হ্যা রুপা বলো। কই হারিয়ে গেছিলা তুমি কিছু
না যানিয়ে?
: হিমু, বেশী কথা বলার সময় নাই,
তুমি আজ বিকেলে ফ্রী আছো?
: হুম, বিকেলে ফ্রী আছি।
: আচ্ছা শোন, আজ সন্ধায় আমার বিয়ে,!! রংপুর থেকে আমার কজন বান্ধবী আসবে। তুমি চাইলে ওদের সাথেও আসতে পার। তাছাড়া, আমি যে ম্যানিব্যাগ টা তোমাক গিফট করছিলাম... ঐটার ভিতর পাশে একটা ছোট্ট কাগজে আমদের বাসার ঠিকানা লিখা আছে.... চলে এসো বিকেলে।
( বাই, বলে দুম করে লাইনটা কেটে দিলো রুপা)
কি করা উচিত হিমু কিছু বুজতে পারলাম না। তাছাড়া... পকেটে মাত্র ২০০ টাকা আছে। যাতায়াত, একটা গিফট, সব মিলিয়ে প্রায় একটি হাজার টাকার দরকাড়।
ধুর.... রুপার বিয়ে, তো কি হয়েছে?
যেতেই হবে এমন কনো কথা আছে। ঘড়িতে এখন দুইটা বাজে। টাকা মেনেজ করার মত সময়ও হাতে নাই।
থাক....নাইবা গেলাম রুপার বিয়েতে। অযথা আর মায়া বাড়িয়ে লাভ কি!!!!
তার চেয়ে বরং একটা ঘুম দেই...
ধুর.... রুপার বিয়ে, তো কি হয়েছে?
যেতেই হবে এমন কনো কথা আছে। ঘড়িতে এখন দুইটা বাজে। টাকা মেনেজ করার মত সময়ও হাতে নাই।
থাক....নাইবা গেলাম রুপার বিয়েতে। অযথা আর মায়া বাড়িয়ে লাভ কি!!!!
তার চেয়ে বরং একটা ঘুম দেই...
তুই কি আমার দুঃখ হবি – আনিসুল হক

তুই কি আমার দুঃখ হবি?
এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া।
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?
তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি।
তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
নিজের ঠোট কামড়ে ধরা রোদন হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি।
তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
নিজের ঠোট কামড়ে ধরা রোদন হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?
জয়ী নই, পরাজিত নই – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
পাহাড়-চুড়ায় দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল
আমি এই পৃথিবীকে পদতলে রেখেছি
এই আক্ষরিক সত্যের কছে যুক্তি মূর্ছা যায়।
শিহরিত নির্জনতার মধ্যে বুক টন্টন করে ওঠে
হাল্কা মেঘের উপচ্ছায়ায় একটি ম্লান দিন
সবুজকে ধূসর হতে ডাকে
আ-দিগন্ত প্রান্তের ও টুকরো ছড়ানো টিলার উপর দিয়ে
ভেসে যায় অনৈতিহাসিক হাওয়া
অরণ্য আনে না কোনো কস্তুরীর ঘ্রাণ
কিছু নিচে ছুটন্ত মহিলার গোলাপি রুমাল উড়ে গিয়ে পড়ে
ফণমনসার ঝোপে
নিঃশব্দ পায়ে চলে যায় খরগোশ আর রোদ্দুর।
এই যে মুহূর্তে, এই যে দাঁড়িয়ে থাকা–এর কোনো অর্থ নেই
ঝর্নার জলে ভেসে যায় সম্রাটের শিরস্ত্রাণ
কমলার কোয়া থেকে খসে পড়া বীজ ঢুকে পড়ে পাতাল গর্ভে
পোল্কা ডট্ দুটি প্রজাপতি তাদের আপন আপন কাজে ব্যস্ত
বাব্লা গাছের শুক্নো কাঁটাও দাবী করেছে প্রকৃতির প্রতিনিধিত্ব।
সব দৃশ্যই এমন নিরপেক্ষ
আমি জয়ী নই, আমি পরাজিত নই, আমি এমনই একজন মানুষ
পাহাড় চূড়ায় পৃথিবীকে পদতলে রেখে, আমার নাভিমূল
থেকে উঠে আসে বিষণ্ন, ক্লান্ত দীর্ঘশ্বাস
এই নির্জনতাই আমার ক্ষমাপ্রার্থী অশ্রুমোচনের মুহূর্ত।।
Monday, April 15, 2019
রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহকে লেখা চিঠি – তসলিমা নাসরিন
প্রিয় রুদ্র,
প্রযত্নেঃ আকাশ,
তুমি আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখতে বলেছিলে। তুমি কি এখন আকাশ জুরে থাকো? তুমি আকাশে উড়ে বেড়াও? তুলোর মতো, পাখির মতো? তুমি এই জগত্সংসার ছেড়ে আকাশে চলে গেছো। তুমি আসলে বেঁচেই গেছো রুদ্র। আচ্ছা, তোমার কি পাখি হয়ে উড়ে ফিরে আসতে ইচ্ছে করে না? তোমার সেই ইন্দিরা রোডের বাড়িতে, আবার সেই নীলক্ষেত, শাহবাগ, পরীবাগ, লালবাগ চষে বেড়াতে? ইচ্ছে তোমার হয় না এ আমি বিশ্বাস করি না, ইচ্ছে ঠিকই হয়, পারো না। অথচ এক সময় যা ইচ্ছে হতো তোমার তাই করতে। ইচ্ছে যদি হতো সারারাত না ঘুমিয়ে গল্প করতে – করতে। ইচ্ছে যদি হতো সারাদিন পথে পথে হাটতে – হাটতে। কে তোমাকে বাধা দিতো? জীবন তোমার হাতের মুঠোয় ছিলো। এই জীবন নিয়ে যেমন ইচ্ছে খেলেছো। আমার ভেবে অবাক লাগে, জীবন এখন তোমার হাতের মুঠোয় নেই। ওরা তোমাকে ট্রাকে উঠিয়ে মিঠেখালি রেখে এলো, তুমি প্রতিবাদ করতে পারোনি। আচ্ছা, তোমার লালবাগের সেই প্রেমিকাটির খবর কি, দীর্ঘ বছর প্রেম করেছিলে তোমার যে নেলী খালার সাথে? তার উদ্দেশ্যে তোমার দিস্তা দিস্তা প্রেমের কবিতা দেখে আমি কি ভীষণ কেঁদেছিলাম একদিন ! তুমি আর কারো সঙ্গে প্রেম করছো, এ আমার সইতো না। কি অবুঝ বালিকা ছিলাম ! তাই কি? যেন আমাকেই তোমার ভালোবাসতে হবে। যেন আমরা দু’জন জন্মেছি দু’জনের জন্য।
যেদিন ট্রাকে করে তোমাকে নিয়ে গেলো বাড়ি থেকে, আমার খুব দম বন্ধ লাগছিলো। ঢাকা শহরটিকে এতো ফাঁকা আর কখনো লাগেনি। বুকের মধ্যে আমার এতো হাহাকারও আর কখনো জমেনি। আমি ঢাকা ছেড়ে সেদিন চলে গিয়েছিলাম ময়মনসিংহে। আমার ঘরে তোমার বাক্সভর্তি চিঠিগুলো হাতে নিয়ে জন্মের কান্না কেঁদেছিলাম। আমাদের বিচ্ছেদ ছিলো চার বছরের। এতো বছর পরও তুমি কী গভীর করে বুকের মধ্যে রয়ে গিয়েছিলে ! সেদিন আমি টের পেয়েছি। আমার বড়ো হাসি পায় দেখে, এখন তোমার শ’য়ে শ’য়ে বন্ধু বেরোচ্ছে। তারা তখন কোথায় ছিলো? যখন পয়সার অভাবে তুমি একটি সিঙ্গারা খেয়ে দুপুর কাটিয়েছো। আমি না হয় তোমার বন্ধু নই, তোমাকে ছেড়ে চলে এসেছিলাম বলে। এই যে এখন তোমার নামে মেলা হয়, তোমার চেনা এক আমিই বোধ হয় অনুপস্থিত থাকি মেলায়। যারা এখন রুদ্র রুদ্র বলে মাতম করে বুঝিনা তারা তখন কোথায় ছিলো? শেষদিকে তুমি শিমুল নামের এক মেয়েকে ভালোবাসতে। বিয়ের কথাও হচ্ছিলো। আমাকে শিমুলের সব গল্প একদিন করলে। শুনে … তুমি বোঝোনি আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। এই ভেবে যে, তুমি কি অনায়াসে প্রেম করছো ! তার গল্প শোনাচ্ছো ! ঠিক এইরকম অনুভব একসময় আমার জন্য ছিলো তোমার ! আজ আরেকজনের জন্য তোমার অস্থিরতা। নির্ঘুম রাত কাটাবার গল্প শুনে আমার কান্না পায় না বলো? তুমি শিমুলকে নিয়ে কি কি কবিতা লিখলে তা দিব্যি বলে গেলে ! আমাকে আবার জিজ্ঞেসও করলে, কেমন হয়েছে। আমি বললাম, খুব ভালো।
শিমুল মেয়েটিকে আমি কোনোদিন দেখিনি, তুমি তাকে ভালোবাসো, যখন নিজেই বললে, তখন আমার কষ্টটাকে বুঝতে দেইনি। তোমাকে ছেড়ে চলে গেছি ঠিকই কিন্তু আর কাউকে ভালোবাসতে পারিনি। ভালোবাসা যে যাকে তাকে বিলোবার জিনিস নয়। আকাশের সঙ্গে কতো কথা হয় রোজ ! কষ্টের কথা, সুখের কথা। একদিন আকাশভরা জোত্স্নায় গা ভেসে যাচ্ছিলো আমাদের। তুমি দু চারটি কষ্টের কথা বলে নিজের লেখা একটি গান শুনিয়েছিলে। “ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি দিও”। মংলায় বসে গানটি লিখেছিলে। মনে মনে তুমি কার চিঠি চেয়েছিলে? আমার? নেলী খালার? শিমুলের? অনেক দিন ইচ্ছে তোমাকে একটা চিঠি লিখি। একটা সময় ছিলো তোমাকে প্রতিদিন চিঠি লিখতাম। তুমিও লিখতে প্রতিদিন। সেবার আরমানিটোলার বাড়িতে বসে দিলে আকাশের ঠিকানা। তুমি পাবে তো এই চিঠি? জীবন এবং জগতের তৃষ্ণা তো মানুষের কখনো মেটে না, তবু মানুষ আর বাঁচে ক’দিন বলো? দিন তো ফুরোয়। আমার কি দিন ফুরোচ্ছে না? তুমি ভালো থেকো। আমি ভালো নেই। ইতি, সকাল পুনশ্চঃ আমাকে সকাল বলে ডাকতে তুমি। কতোকাল ঐ ডাক শুনি না। তুমি কি আকাশ থেকে সকাল, আমার সকাল বলে মাঝে মধ্যে ডাকো? নাকি আমি ভুল শুনি?
বিবাহিতাকে – জয় গোস্বামী
কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, তুমি আমার সামনে দাড়ালেই আমি
তোমার ভিতরে একটা বুনো ঝোপ দেখতে পাই।
ওই ঝোপে একটা মৃতদেহ ঢাকা দেওয়া আছে।
অনেকদিন ধ’রে আছে। কিন্তু আশ্চর্য যে
এই মৃতদেহ জল, বাতাস, রৌদ্র ও সকলপ্রকার
কীট-বীজাণুকে প্রতিরোধ করতে পারে। এরপচন নেই।
বন্য প্রাণীরাও এর কাছে ঘেঁষে না।
রাতে আলো বেরোয় এর গা থেকে।
আমি জানি, মৃতদেহটা আমার।
কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, এই জারিজুরি এবার ফাঁস হওয়া প্রয়োজন।
আর তা হবেও, যেদিন চার পায়ে গুঁড়ি মেরেগিয়ে
পা কামড়ে ধ’রে, ওটাকে, ঝোপ থেকে
টেনে বার করব আমি।
খতিয়ান – রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ
" খতিয়ান"
– রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ
– রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ
হাত বাড়ালেই মুঠো ভরে যায় ঋণে
অথচ আমার শস্যের মাঠ ভরা।
রোদ্দুর খুঁজে পাই না কখনো দিনে,
আলোতে ভাসায় রাতের বসুন্ধরা।
টোকা দিলে ঝরে পচা আঙুলের ঘাম,
ধস্ত তখন মগজের মাস্তুল
নাবিকেরা ভোলে নিজেদের ডাক নাম
চোখ জুড়ে ফোটে রক্তজবার ফুল।
ডেকে ওঠো যদি স্মৃতিভেজা ম্লান স্বরে,
উড়াও নীরবে নিভৃত রুমালখানা
পাখিরা ফিরবে পথ চিনে চিনে ঘরে
আমারি কেবল থাকবে না পথ জানা–
টোকা দিলে ঝরে পড়বে পুরনো ধুলো
চোখের কোণায় জমা একফোঁটা জল।
কার্পাস ফেটে বাতাসে ভাসবে তুলো
থাকবে না শুধু নিবেদিত তরুতল
জাগবে না বনভূমির সিথানে চাঁদ
বালির শরীরে সফেদ ফেনার ছোঁয়া
পড়বে না মনে অমীমাংসিত ফাঁদ
অবিকল রবে রয়েছে যেমন শোয়া
হাত বাড়ালেই মুঠো ভরে যায় প্রেমে
অথচ আমার ব্যাপক বিরহভূমি
ছুটে যেতে চাই– পথ যায় পায়ে থেমে
ঢেকে দাও চোখ আঙুলের নখে তুমি
স্বয়ম্ভূ সুন্দর – নির্মলেন্দু গুণ

নির্মলেন্দু গুণযতক্ষণ জেগে থাকি, দরোজাটা বন্ধ করি না। কেবলই মনে হয় কেউ একজন আসবে। আমার প্রত্যাশায় এমন একজন নারী আছে, কোনো শিল্পী যাকে আঁকতে পারেনি। লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, আঁরি মাতিস, পাবলো পিকাসো অথবা যামিনী রায়, কেউ-ই আঁকতে পারে নি তাকে। মারকন্যার উদাস দৃষ্টির মধ্যে মুহূর্তর জন্য আমি তাকে মূর্ত হতে দেখেছিলাম খাজুরাহে। ব্যর্থ শিল্পী, আমার বাবার আঁকা একটি জলরঙ ছবির ভিতরে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম তার পেছন ফিরে তাকানোর উদ্দীপক সলজ্জ ভঙ্গিটি। যদিও আমি জানি যে, সে-ছবির মডেল ছিলেন আমার সিক্তবসনা মাতা, আমার জননী। এভাবেই কুড়িয়ে পাওয়া খণ্ড-খণ্ড দৃশ্যগুলোকে মালার মতো গেঁথে যদি তাকে আঁকা যায়, আমার মনে হয় না তাতেও খুব একটা লাভ হবে। কেননা, শিল্পমাত্রই তো অনুকৃতি, বাস্তবের। অথচ আমি যার কথা ভাবি, যার জন্য অন্ধকারের দুয়ার খুলে দিয়ে বসে থাকি অপেক্ষায়- তাকে আমি কোনদিন বাইরে দেখিনি। তাই কেমন করে বলি, তাকে কেমনতরো দেখায়? সে তো গাছের ফুলের মতো নয়, সে তো আকাশের বৃষ্টি ভেজা সহজলভ্য চাঁদের মতো নয়। সে অন্যরকম। ভীষণ অন্যরকম। তার যুগলস্তনের দুর্গে মাথা কোটে অরন্য-পর্বত। তার উড়ন্ত ঊরুযুগে পদানত মেঘের উর্বশী। প্রজননের সঙ্গে অসম্পৃক্ত তার গর্ভদেশ। তার যুগলব্যাকুলবাহু পুরুষকে আলিঙ্গনে জড়িয়ে রাখা ছাড়া আর কোনো জাগতিক কর্তব্য শিখেনি। আমি চাই সে আমার জাগরণের মধ্যে আসুক। কারো কন্যারুপে নয়, কারো ভগ্নিরুপে নয়, কারো বধূরুপে নয়, কারো মাতৃরুপে নয়, জগৎ-সংসারের সকল বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে সে আসুক, স্বয়ম্ভূ সুন্দর। সে যখন সম্পূর্ণ নিরাভরণ, তখন যেমন উলঙ্গতার আচ্ছাদনে সে চিরআবৃতা, তেমনি, যখন সে কল্পনার অন্ধকারে ছায়াবৃতা; তখনও আমার দৃষ্টির মধ্যে সে চির-নগ্ন। আমি যাচ্ঞা করি সেই চির-নগ্নিকাকে। যতক্ষণ জেগে থাকি, দরোজাটা বন্ধ করি না। মন বলে সে আসবে। আমি চাই না, সে আমার নিদ্রার মধ্যে আসুক, আর আমি নিদ্রাশেষে, জাগরণে তার চলে যাওয়ার বেদনায় অশ্রুপাত করি।
দুঃখ করো না, বাঁচো
দুঃখ করো না, বাঁচো
– নির্মলেন্দু গুণ

দুঃখ করো না, বাঁচো, প্রাণ ভ’রে বাঁচো ।
বাঁচার আনন্দে বাঁচো । বাঁচো, বাঁচো এবং বাঁচো ।
জানি মাঝে-মাঝেই তোমার দিকে হাত বাড়ায় দুঃখ,
তার কালো লোমশ হাত প্রায়ই তোমার বুক ভেদ করে
চলে যেতে চায়, তা যাক, তোমার বক্ষ যদি দুঃখের
নখরাঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়; যদি গলগল করে রক্ত ঝরে,
তবু দুঃখের হাতকে তুমি প্রশ্রয় দিও না মুহূর্তের তরে ।
তার সাথে করমর্দন করো না, তাকে প্রত্যাখান করো ।
অনুশোচনা হচ্ছে পাপ, দুঃখের এক নিপুণ ছদ্মবেশ ।
তোমাকে বাঁচাতে পারে আনন্দ । তুমি তার হাত ধরো,
তার হাত ধরে নাচো, গাও, বাঁচো, ফুর্তি করো ।
দুঃখকে স্বীকার করো না, মরে যাবে, ঠিক মরে যাবে ।
যদি মরতেই হয় আনন্দের হাত ধ’রে মরো ।
বলো, দুঃখ নয়, আনন্দের মধ্যেই আমার জন্ম,
আনন্দের মধ্যেই আমার মৃত্যু, আমার অবসান
বলো, দুঃখ নয়, আনন্দের মধ্যেই আমার জন্ম,
আনন্দের মধ্যেই আমার মৃত্যু, আমার অবসান
Saturday, April 13, 2019
হঠাৎ দেখা
হঠাৎদেখা রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা , ভাবিনি সম্ভব হবে কোনদিন ।। আগে ওকে বারবার দেখেছি লাল রঙের শাড়িতে -- দালিম-ফুলের মত রাঙা; আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়, আঁচল তুলেছে মাথায় দোলন-চাঁপার মত চিকন-গৌর মুখখানি ঘিরে । মনে হল, কাল রঙের একটা গভীর দূরত্ব ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে, যে দূরত্ব সর্ষেক্ষেতের শেষ সীমানায় শালবনের নীলাঞ্জনে । থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা : চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে ।। হঠাৎ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে আমাকে করলে নমস্কার । সমাজবিধির পথ গেল খুলে : আলাপ করলেম শুরু -- 'কেমন আছো', 'কেমন চলছে সংসার ' ইত্যাদি । সে রইল জানালার বাইরের দিকে চেয়ে যেন কাছের-দিনের-ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে । দিলে অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা জবাব , কোনটা বা দিলেই না । বুঝিয়ে দিলে হাতের অস্থিরতায় -- কেন এ-সব কথা , এর চেয়ে অনেক ভাল চুপ ক'রে থাকা ।। আমি ছিলেম অন্য বেঞ্চিতে ওর সাথিদের সঙ্গে । এক সময়ে আঙুল নেড়ে জানালে কাছে আসতে । মনে হল কম সাহস নয় -- বসলুম ওর এক বেঞ্চিতে । গাড়ির আওয়াজের আড়ালে বললে মৃদুস্বরে , 'কিছু মনে কোরো না , সময় কোথা সময় নষ্ট করবার ! আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই ; দূরে যাবে তুমি , তাই, যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে , শুনব তোমার মুখে । সত্য করে বলবে তো ?' আমি বললাম ,'বলব' । বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোল, 'আমাদের গেছে যে দিন একেবারেই কি গেছে -- কিছুই কি নেই বাকি?' একটুকু রইলেম চুপ করে ; তার পর বললেম , 'রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে' । খটকা লাগল, কী জানি বানিয়ে বললেম নাকি । ও বললে, 'থাক এখন যাও ও দিকে' সবাই নেমে গেল পরের স্টেশনে । আমি চললেম একা ।।
Friday, April 12, 2019
অনেকটা সময় গত হলো,
উৎসর্গঃ "শশী"কে
অনেকটা সময় গত হলো, তোমার দেখা নেই, অনেকটা বছর গত হলো, তোমার সাথে কথা নেই!
সেদিন শেষবারের মত যখন তোমার সাথে কথা হলো, খুব অভিমান নিয়ে বলেছিলাম যদি আমার শহরে বিষাদের মেলা বসে, বসুক!
যদি আমার আকাশে রংধনুর রং না ভাসে, তবে না ভাসুক!
তবুও তোমার কাছে ফিরে আসবো না!
কষ্ট আর অভিমান নিয়ে সেদিন না হয় কিছু কথা বলেছিলাম কিন্তু তুমি তো জানতে ও আমার মুখের কথা মনের কথা নয়!
কিন্তু সেদিন তুমি একবারও বলোনি, অবুঝ ভালবাসি!
তুমি তো জানতে তোমার মুখে অবুঝ ডাক শুনলে আমার অভিমানগুলো আর অভিমান থাকে না!
আমার কষ্টগুলো আর কষ্ট থাকে না!
তুমি তো জানতে তোমার মুখে অবুঝ ডাক শুনলে আমার অভিমানগুলো আর অভিমান থাকে না!
আমার কষ্টগুলো আর কষ্ট থাকে না!
কষ্ট আর অভিমান তখন মুচকি হেসে বলে আমিও ভালবাসি মৃন্ময়ী, খুব বেশি!
হয়তো তুমিও চাইতে সম্পর্কের ইতি ঘটুক, ভালবাসার অবসান হোক!
তাই হবে, নয়তো অবুঝ বলে সেদিন ডাকলে না যে?
ভালবাসি বলে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলে না যে?
তাই হবে, নয়তো অবুঝ বলে সেদিন ডাকলে না যে?
ভালবাসি বলে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলে না যে?
সম্পর্কের বেলাতো ফুরিয়ে ছিল বহুকাল আগেই, যখন তুমি মিথ্যে অযুহাতে ব্যস্ততার দোহাই দিতে!
ব্যস্ততার গল্প বলে আমায় মিথ্যে আশ্বাস দিতে!
ভয় নেই, আমি কিন্তু বুকে অভিমান পুষে রাখিনি, বেলা-অবেলায় বেইমান বলে গাল দেইনি!
ব্যস্ততার গল্প বলে আমায় মিথ্যে আশ্বাস দিতে!
ভয় নেই, আমি কিন্তু বুকে অভিমান পুষে রাখিনি, বেলা-অবেলায় বেইমান বলে গাল দেইনি!
মৃণ্ময়ী, এই যে এতটা সময় গত হলো আমি কিন্তু ঠিকই বেচে আছি, হয়তো রংধনুর আদলে আমার আকাশে বিষাদের চাষ হয়, তবুও তো দিব্যি বেচে আছি, আছি না?
কতগুলো বসন্ত গত হলো তোমার মুখে 'অবুঝ' ডাকটা শুনিনা, গুনে গুনে ১২টা বসন্ত; এক যুগ!
এটা কি কোনো অংশে কম?
কত শখ করে দিয়েছিলে নামটা, মৃণ্ময়ী!
এটা কি কোনো অংশে কম?
কত শখ করে দিয়েছিলে নামটা, মৃণ্ময়ী!
সেবার খুব করে ইচ্ছে হলো তোমার মুখে 'অবুঝ' ডাকটা শুনতে!
মোবাইল রেখে কম্পিউটার সবটা ঘাটলাম, যদি একটা রেকর্ড পাই তোমার!
কেমন যেনো উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলাম, নিজের শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করলাম, শুধু এই বলে, কী দোষো তোমার সবকিছুর ইতি টেনেছিলাম!
মোবাইল রেখে কম্পিউটার সবটা ঘাটলাম, যদি একটা রেকর্ড পাই তোমার!
কেমন যেনো উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলাম, নিজের শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করলাম, শুধু এই বলে, কী দোষো তোমার সবকিছুর ইতি টেনেছিলাম!
এখন মন খারাপের দিনে আমি আকাশ দেখি, পড়ন্ত বিকেলে অস্ত যাওয়া সূর্য দেখি!
মৃন্ময়ী, সেদিন খুব সহজেই দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।
বিচ্ছেদটাও,
এখন প্রশ্ন শুধু একটাই
ভিতরের গুমরে মরা শূন্যতাকে
পেরেছি কি আদৌ মুছে ফেলতে?
মৃন্ময়ী, সেদিন খুব সহজেই দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।
বিচ্ছেদটাও,
এখন প্রশ্ন শুধু একটাই
ভিতরের গুমরে মরা শূন্যতাকে
পেরেছি কি আদৌ মুছে ফেলতে?
মাঝেমধ্যে হঠাৎ করেই আমার বুকটা বিষম কেঁপে ওঠে, বুঝতে পারি এ শহরে আমি বড্ড একা, এই শহরটায় আমার আপন বলতে দুকুলে কেঁউ নেই!
মৃণ্ময়ী, তোমারও কি এমনভাবে বুকটা বিষম কেঁপে ওঠে?
মৃণ্ময়ী, তোমারও কি এমনভাবে বুকটা বিষম কেঁপে ওঠে?
সেদিন কোথায় যেনো শুনলাম, এক লেখিকা পুরুষকে মানুষ বলে মনে করে না, পুরুষ নাকি মানুষ না, অন্যকিছু!
আচ্ছা মৃণ্ময়ী, পুরুষ কি মানুষ নয়?
তাদের কী হৃদয় বলতে কিছু থাকে না?
আচ্ছা মৃণ্ময়ী, পুরুষ কি মানুষ নয়?
তাদের কী হৃদয় বলতে কিছু থাকে না?
তুমি শুনেছো?
এই যে শহর দেখছ, সভ্যতা দেখছ; তাদের অদ্ভুত
সব নিয়মকানুন!
পুরুষদের নাকি কাঁদতে নেই, চোখের জল ফেলতে নেই!
এই যে আজ আমি আহাজারি করছি, তুমি নিশ্চয় দেখবে পাছে কেউ, আমায় কাপুরুষ বলে ডাকবে!
এই যে শহর দেখছ, সভ্যতা দেখছ; তাদের অদ্ভুত
সব নিয়মকানুন!
পুরুষদের নাকি কাঁদতে নেই, চোখের জল ফেলতে নেই!
এই যে আজ আমি আহাজারি করছি, তুমি নিশ্চয় দেখবে পাছে কেউ, আমায় কাপুরুষ বলে ডাকবে!
যাবার বেলায়, সেদিন তুমি বললে "ভালো থেকো"
কিন্তু তুমি তো জানতে, কীসে আমি ভালো থাকি?
আমার ভালো থাকার মাধ্যম টা কী?
আমার ভালো থাকার মাধ্যম টা শুধুই তুমি ছিলে!
"তুমি তেই সীমাবদ্ধ"!
কিন্তু তুমি তো জানতে, কীসে আমি ভালো থাকি?
আমার ভালো থাকার মাধ্যম টা কী?
আমার ভালো থাকার মাধ্যম টা শুধুই তুমি ছিলে!
"তুমি তেই সীমাবদ্ধ"!
আমি জানি এ ভুল আর কোনদিন ভাঙ্গবে না, তবুও যদি কখনো ভুল ভাঙে তবে ডাক দিও,
আমিও সেদিন রুদ্রের মত বলবো, মৃত্যুর আলিঙ্গন ফেলে আত্মমগ্ন আগুন
ললাটের সৌমতায় তোমার লিখে দেবো
আমিও সেদিন রুদ্রের মত বলবো, মৃত্যুর আলিঙ্গন ফেলে আত্মমগ্ন আগুন
ললাটের সৌমতায় তোমার লিখে দেবো
একখানা প্রিয় নাম - ভালোবাসি !!, তোমার দেখা নেই, অনেকটা বছর গত হলো, তোমার সাথে কথা নেই!
সেদিন শেষবারের মত যখন তোমার সাথে কথা হলো, খুব অভিমান নিয়ে বলেছিলাম যদি আমার শহরে বিষাদের মেলা বসে, বসুক!
যদি আমার আকাশে রংধনুর রং না ভাসে, তবে না ভাসুক!
তবুও তোমার কাছে ফিরে আসবো না!
সেদিন শেষবারের মত যখন তোমার সাথে কথা হলো, খুব অভিমান নিয়ে বলেছিলাম যদি আমার শহরে বিষাদের মেলা বসে, বসুক!
যদি আমার আকাশে রংধনুর রং না ভাসে, তবে না ভাসুক!
তবুও তোমার কাছে ফিরে আসবো না!
কষ্ট আর অভিমান নিয়ে সেদিন না হয় কিছু কথা বলেছিলাম কিন্তু তুমি তো জানতে ও আমার মুখের কথা মনের কথা নয়!
কিন্তু সেদিন তুমি একবারও বলোনি, অবুঝ ভালবাসি!
তুমি তো জানতে তোমার মুখে অবুঝ ডাক শুনলে আমার অভিমানগুলো আর অভিমান থাকে না!
আমার কষ্টগুলো আর কষ্ট থাকে না!
তুমি তো জানতে তোমার মুখে অবুঝ ডাক শুনলে আমার অভিমানগুলো আর অভিমান থাকে না!
আমার কষ্টগুলো আর কষ্ট থাকে না!
কষ্ট আর অভিমান তখন মুচকি হেসে বলে আমিও ভালবাসি মৃন্ময়ী, খুব বেশি!
হয়তো তুমিও চাইতে সম্পর্কের ইতি ঘটুক, ভালবাসার অবসান হোক!
তাই হবে, নয়তো অবুঝ বলে সেদিন ডাকলে না যে?
ভালবাসি বলে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলে না যে?
তাই হবে, নয়তো অবুঝ বলে সেদিন ডাকলে না যে?
ভালবাসি বলে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলে না যে?
সম্পর্কের বেলাতো ফুরিয়ে ছিল বহুকাল আগেই, যখন তুমি মিথ্যে অযুহাতে ব্যস্ততার দোহাই দিতে!
ব্যস্ততার গল্প বলে আমায় মিথ্যে আশ্বাস দিতে!
ভয় নেই, আমি কিন্তু বুকে অভিমান পুষে রাখিনি, বেলা-অবেলায় বেইমান বলে গাল দেইনি!
ব্যস্ততার গল্প বলে আমায় মিথ্যে আশ্বাস দিতে!
ভয় নেই, আমি কিন্তু বুকে অভিমান পুষে রাখিনি, বেলা-অবেলায় বেইমান বলে গাল দেইনি!
মৃণ্ময়ী, এই যে এতটা সময় গত হলো আমি কিন্তু ঠিকই বেচে আছি, হয়তো রংধনুর আদলে আমার আকাশে বিষাদের চাষ হয়, তবুও তো দিব্যি বেচে আছি, আছি না?
কতগুলো বসন্ত গত হলো তোমার মুখে 'অবুঝ' ডাকটা শুনিনা, গুনে গুনে ১২টা বসন্ত; এক যুগ!
এটা কি কোনো অংশে কম?
কত শখ করে দিয়েছিলে নামটা, মৃণ্ময়ী!
এটা কি কোনো অংশে কম?
কত শখ করে দিয়েছিলে নামটা, মৃণ্ময়ী!
সেবার খুব করে ইচ্ছে হলো তোমার মুখে 'অবুঝ' ডাকটা শুনতে!
মোবাইল রেখে কম্পিউটার সবটা ঘাটলাম, যদি একটা রেকর্ড পাই তোমার!
কেমন যেনো উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলাম, নিজের শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করলাম, শুধু এই বলে, কী দোষো তোমার সবকিছুর ইতি টেনেছিলাম!
মোবাইল রেখে কম্পিউটার সবটা ঘাটলাম, যদি একটা রেকর্ড পাই তোমার!
কেমন যেনো উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলাম, নিজের শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করলাম, শুধু এই বলে, কী দোষো তোমার সবকিছুর ইতি টেনেছিলাম!
এখন মন খারাপের দিনে আমি আকাশ দেখি, পড়ন্ত বিকেলে অস্ত যাওয়া সূর্য দেখি!
মৃন্ময়ী, সেদিন খুব সহজেই দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।
বিচ্ছেদটাও,
এখন প্রশ্ন শুধু একটাই
ভিতরের গুমরে মরা শূন্যতাকে
পেরেছি কি আদৌ মুছে ফেলতে?
মৃন্ময়ী, সেদিন খুব সহজেই দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।
বিচ্ছেদটাও,
এখন প্রশ্ন শুধু একটাই
ভিতরের গুমরে মরা শূন্যতাকে
পেরেছি কি আদৌ মুছে ফেলতে?
মাঝেমধ্যে হঠাৎ করেই আমার বুকটা বিষম কেঁপে ওঠে, বুঝতে পারি এ শহরে আমি বড্ড একা, এই শহরটায় আমার আপন বলতে দুকুলে কেঁউ নেই!
মৃণ্ময়ী, তোমারও কি এমনভাবে বুকটা বিষম কেঁপে ওঠে?
মৃণ্ময়ী, তোমারও কি এমনভাবে বুকটা বিষম কেঁপে ওঠে?
সেদিন কোথায় যেনো শুনলাম, এক লেখিকা পুরুষকে মানুষ বলে মনে করে না, পুরুষ নাকি মানুষ না, অন্যকিছু!
আচ্ছা মৃণ্ময়ী, পুরুষ কি মানুষ নয়?
তাদের কী হৃদয় বলতে কিছু থাকে না?
আচ্ছা মৃণ্ময়ী, পুরুষ কি মানুষ নয়?
তাদের কী হৃদয় বলতে কিছু থাকে না?
তুমি শুনেছো?
এই যে শহর দেখছ, সভ্যতা দেখছ; তাদের অদ্ভুত
সব নিয়মকানুন!
পুরুষদের নাকি কাঁদতে নেই, চোখের জল ফেলতে নেই!
এই যে আজ আমি আহাজারি করছি, তুমি নিশ্চয় দেখবে পাছে কেউ, আমায় কাপুরুষ বলে ডাকবে!
এই যে শহর দেখছ, সভ্যতা দেখছ; তাদের অদ্ভুত
সব নিয়মকানুন!
পুরুষদের নাকি কাঁদতে নেই, চোখের জল ফেলতে নেই!
এই যে আজ আমি আহাজারি করছি, তুমি নিশ্চয় দেখবে পাছে কেউ, আমায় কাপুরুষ বলে ডাকবে!
যাবার বেলায়, সেদিন তুমি বললে "ভালো থেকো"
কিন্তু তুমি তো জানতে, কীসে আমি ভালো থাকি?
আমার ভালো থাকার মাধ্যম টা কী?
আমার ভালো থাকার মাধ্যম টা শুধুই তুমি ছিলে!
"তুমি তেই সীমাবদ্ধ"!
কিন্তু তুমি তো জানতে, কীসে আমি ভালো থাকি?
আমার ভালো থাকার মাধ্যম টা কী?
আমার ভালো থাকার মাধ্যম টা শুধুই তুমি ছিলে!
"তুমি তেই সীমাবদ্ধ"!
আমি জানি এ ভুল আর কোনদিন ভাঙ্গবে না, তবুও যদি কখনো ভুল ভাঙে তবে ডাক দিও,
আমিও সেদিন রুদ্রের মত বলবো, মৃত্যুর আলিঙ্গন ফেলে আত্মমগ্ন আগুন
ললাটের সৌমতায় তোমার লিখে দেবো
একখানা প্রিয় নাম - ভালোবাসি !!
আমিও সেদিন রুদ্রের মত বলবো, মৃত্যুর আলিঙ্গন ফেলে আত্মমগ্ন আগুন
ললাটের সৌমতায় তোমার লিখে দেবো
একখানা প্রিয় নাম - ভালোবাসি !!
Sunday, April 7, 2019
তুমি ভালো থেকো
ভীষন আধারে ঘুম আসেনা তোমার বেলকনির আলো জ্বেলে রেখো মন ভুলে দরজাটা খোলা আছে কিনা একটু খেয়াল করে দেখো জানি মাঝরাতে পাবে পিপাসা তোমার মাথার পাশে জল রেখো পারবোনা ছুঁতে শুধু স্বপ্নে এসে বলব তুমি ভালো থেকো তোমার কপালের যত কালো টিপ জমিয়ে রেখেছি দেখো ডায়েরী খুলে ধুলো পড়া উপহার সে 'গীতবিতান' যতন করে মুছে রেখো তুলে তোমার কপালের যত কালো টিপ জমিয়ে রেখেছি দেখো ডায়েরী খুলে ধুলো পড়া উপহার সে 'গীতবিতান' যতন করে মুছে রেখো তুলে ছেড়োনা গানের চর্চা তুমি পিয়ানোটা ভালো করে শেখো পারবোনা ছুঁতে, শুধু স্বপ্নে এসে বলব তুমি ভালো থেকো কেউ না জানুক, শুধু আমিতো জানি ওষুধটা খেতে ভুলে যাবে যে রাতে চশমাটা মনে করে সাথেই রেখো সাবধানে থেকো রাস্তা পেরোতে মুছোনা চোঁখের কাঁজল তুমি চুলগুলো বেণী করে রেখো মেঁহেদী রাঙা সে হাতের ছোঁয়ায় ফ্রেমে বাঁধা ছবিটাকে দেখো পারবোনা ছুঁতে, শুধু স্বপ্নে এসে বলব তুমি ভালো থেকো ভীষন আধারে ঘুম আসেনা তোমার বেলকনির আলো জ্বেলে রেখো মন ভুলে দরজাটা খোলা আছে কিনা একটু খেয়াল করে দেখো পারবোনা ছুঁতে, শুধু স্বপ্নে এসে বলব তুমি ভালো থেকো পারবোনা ছুঁতে, শুধু স্বপ্নে এসে বলব তুমি ভালো থেকো।।
আহারে জীবন ... আহা জীবন !
কার্নিশে ভুল, অবেলা বকুল ,
থাকো ছুঁয়ে... একুল , ওকুল ।
থাকো ছুঁয়ে ... শহুরে বাতাস ,
ছুঁয়ে থাকো নিয়ন আকাশ ।
আবছায়া চলে যায় হিজলের দিন ,
অভিমান জমে জমে আমি ব্যথাহীন । - [ ২ বার ]
আহারে জীবন ... আহা জীবন !
জলে ভাসা পদ্ম যেমন ।
আহারে জীবন ... আহা জীবন !
জলে ভাসা পদ্ম জীবন ।
আহা পারতাম, যদি পারতাম ,
আঙুল গুলো ছুঁয়ে থাকতাম ।
বিষাদেরই জাল , টালমাটাল ,
এ কোন দেয়াল , এ কোন আড়াল ।
চাই হয় গোধূলি , কারে যে বলি ,
এ কোন শ্রাবণ আজ বয়ে চলি ।
আহারে জীবন ... আহা জীবন !
জলে ভাসা পদ্ম যেমন ।
আহারে জীবন ... আহা জীবন !
জলে ভাসা পদ্ম জীবন ।
আহা সংশয় , যা হবারই হয়
বোঝেনা হৃদয় কত অপচয় ,
কনক্রিট মন , মিছে আলাপন
বিসর্জনে ক্লান্ত ভীষণ ।
মেঘে মেঘে জমে আজ বেদনার বাঁধ ,
ঢেউ ঢেউ থেকে থেকে জলে নিলাম ।
আহারে জীবন ... আহা জীবন !
জলে ভাসা পদ্ম যেমন ।
আহারে জীবন ... আহা জীবন !
জলে ভাসা পদ্ম জীবন ।
Saturday, April 6, 2019
তবু ভালো থাকিস
তবু ভালো থাকিস
বল কি কি থেকে মুছে ফেলবি আমায়?
তোর ল্যাপটপ, তোর প্রোফাইল।
তোর ইনবক্স, তোর মোবাইল।
মুছতে পারবি সেই ঠান্ডা হাসি,
আদর, অভিমান,
ভালোবাসাবাসি।
পাল্টে ফেলেছিস বাড়ী ফেরার পথ। একসাথে চলা সেই ছায়াপথ। ভুলতে পেরেছিস ফোন নম্বর, চেনামুখ আর পরিচিত স্বর।
বলনা কেন এভাবে পাল্টে গেলি? কাকে বলিস এখন মনের কথা, রাতজাগা তোর চুপকথা। বোঝে তোকে তোরই মতো, কাউকে পেলি এমন আমায় ছাড়া। হৃদয় থেকে অনেক দুরে জানিনা আছিস কোন অচিনপুরে। ভালো থাক তবু যেখানেই থাকিস, আমায় মনে নাই বা রাখিস।
পাল্টে ফেলেছিস বাড়ী ফেরার পথ। একসাথে চলা সেই ছায়াপথ। ভুলতে পেরেছিস ফোন নম্বর, চেনামুখ আর পরিচিত স্বর।
বলনা কেন এভাবে পাল্টে গেলি? কাকে বলিস এখন মনের কথা, রাতজাগা তোর চুপকথা। বোঝে তোকে তোরই মতো, কাউকে পেলি এমন আমায় ছাড়া। হৃদয় থেকে অনেক দুরে জানিনা আছিস কোন অচিনপুরে। ভালো থাক তবু যেখানেই থাকিস, আমায় মনে নাই বা রাখিস।
Subscribe to:
Posts (Atom)
সুখ, ভালোবাসা, আদর
জীবনকে সঠিক পথে চলতে কষ্ট করে পড়ার অনুরোধ রইল ----------------------- ১. ঘুম থেকে উঠে নামাজ ও স্রষ্টার প্রতি আপনার আজকের প্রার্থনা করে নিন। ...
-
তবু ভালো থাকিস বল কি কি থেকে মুছে ফেলবি আমায়? তোর ল্যাপটপ, তোর প্রোফাইল। তোর ইনবক্স, তোর মোবাইল। মুছতে পারবি সেই ঠান্ডা হাসি, আদর, অভিমান...
-
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা প্রিয় কবিতা ) হঠাৎদেখা রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা , ভাবিনি সম্ভব হবে কোনদিন ।। আগে ওকে ...
-
হঠাৎ সেদিন কিছু না জানিয়ে রংপুর থেকে বাসায় চলে যায় রুপা। হিমু অনেকবার ফোনে চেষ্টা করেও পায়নি, বাসায় যাওয়ার পরথেকেই তার ফোনটা বন...